ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এর উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়ী দিবস উদযাপিত
গত ২২ শে অক্টোবর, ২২০৪, ছিল বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়ী মুক্ত দিবস।।
এ দিন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এর উদ্যোগে সকাল ৭-০০ ঘটিকায় ঢাকার হাতিরঝিলের দক্ষিণ বেগুনবাড়ী প্রান্ত থেকে বাইসাইকেল র্যালি ও হাঁটা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। তারপর দুপুর আড়াইটায় ডিটিসিএ সম্মেলন কক্ষে শুরু হয় আলোচনা সভা। সংবাদ বিবরণী।
রাজধানী ঢাকায় সড়ক যোগাযোগে অবকাঠামোগত খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও যানজট থেকে মুক্তি মেলেনি। প্রতিদিন যানজটে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব একই সভায় আলোচকেরা বলেছেন, ঢাকা শহরে ৪ কোটি ট্রিপের মধ্যে ৩৮ শতাংশ হেঁটে সংঘটিত হলেও পথচারীদের জন্য ঢাকায় নিরাপদ পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়লেও শৃঙ্খলা না থাকায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তাঁরা।
দিনটি উপলক্ষে সকাল ৭টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত হাতিরঝিলের সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ বছর বিশ্ব গাড়িমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “বায়ু দুষণ হ্রাসে একটি মহান সুযোগ।”
‘ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি, হাঁটা, বাইসাইকেল ও গণপরিবহন বান্ধব শহর গড়ি’ শিরোনামের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার। অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাফিউল হাসান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ,এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন,
বাংলাদেশ ট্যূরিস্ট সাইক্লিস্ট এর প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম টুববুস, ধানমন্ডি ট্যূরিস্ট সাইক্লিস্ট এর প্রধান সমন্বয়কারী, মোহাম্মদ তাহাজ্জুদ হোসেন, এম এস গ্রুপের মোহাম্মদ আলী রিমন, বিশিষ্ট সাইক্লিস্ট ,মহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন সহ প্রমুখ, সভার শুরুতে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের প্রয়োজনীয়তা এবং ইতিহাস বিষয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান মূল প্রবন্ধে বলেন, গাড়িভিত্তিক উন্নয়নের দুষ্টুচক্রের ফলে রাস্তা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের সংখ্যা বেড়েছে, গাড়িও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে যানজট এবং দূষণ। যানজটের কারণে রাজধানীতে দিনে বাংলাদেশে ‘কার ফ্রি ডে’ অনেক বছর ধরে উদ্যাপন করা হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নীতি নির্ধারণী মহল থেকে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা, ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান তাঁর বক্তব্যে ‘কার ফ্রি স্কুল জোন’ গড়ে তোলা, পথচারীবান্ধব রাস্তা তৈরি, ব্যক্তিগত গাড়ির প্রণোদনা সীমাবদ্ধ করা; বাস রুট যৌক্তিকীকরণ প্রকল্পের সেবা ও পরিধি বৃদ্ধি, গণপরিবহন তথা বাস, রেল ও নৌপথ এবং হাঁটার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বলেন, ঢাকা শহরে চার কোটি ট্রিপের মধ্যে ৩৮ শতাংশ ট্রিপ সংঘটিত হয় হেঁটে। ফুটপাতও এ শহরে অনেক অপ্রশস্ত হয়ে গেছে। পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে। এ শহরে দেখা যায় একটি শিশুর জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। ফলে যানজট বাড়ছে এবং গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়লেও শৃঙ্খলা না থাকায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি জানান, রাজধানীর একটি সড়ককে যেন সপ্তাহে একদিন গাড়িমুক্ত রাখা যায়, সে জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ঢাকা শহরে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত মোট মোটরযানের মধ্যে গণপরিবহন মাত্র ১০ শতাংশ। ব্যক্তিগত গাড়ির অনুপাতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ছে না। জনবান্ধব নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত করে বহু মাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের ৩৩টি দেশের প্রায় ১ হাজার শহরে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার শহরে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। বোগোটা ও জাকার্তায় গাড়িমুক্ত সপ্তাহ পালন হয়ে থাকে। কোপেনহেগেনসহ ইউরোপের অনেক শহর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন সড়কে মোটরযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, যেখানে শুধু পথচারী এবং সাইক্লিস্ট চলাচল করেন।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন শুরু হয়। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সমন্বয়ে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ঢাকা শহরের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটিতে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এ সোসাইটির ১,২, ৩ নং সড়কে এ আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি মাসের তৃতীয় শনিবারে নিয়মিতভাবে এ আয়োজন করা হয়। বর্তমানে খিলগাঁও, গেন্ডারিয়া, শ্যামলীতে নিয়মিতভাবে গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।