হবিগঞ্জে টিলা কেটে বাগান উজাড়, হুমকির মুখে পরিবেশ
পাহাড়ি টিলা আর সমতল ভূমির ওপর নির্দিষ্ট দূরত্বে সারি সারি রাবার গাছ। শ্যামল-সবুজ নৈসর্গিক এই সৌন্দর্য দেখতেও অনেকে আসেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রূপাইছড়া রাবার বাগানে।
তবে জায়গা দখল করে গাছ কাটা আর বালু উত্তোলনের জন্য অস্তিত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে সরকারি মালিকানাধীন এ বাগানটি।
এই বাগান রক্ষার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁদের অবহেলাতে ইতিমধ্যে রাবার বাগানের প্রায় ১৯ একর ভূমি হাতছাড়া হয়ে গেছে। বাগানটির মোট আয়তন ১ হাজার ৯৬৩ একর। দেশে সরকারি মালিকানাধীন রাবার–বাগান আছে ১৭টি, এর মধ্যে ৪টির অবস্থান সিলেট বিভাগে। তার মধ্যে অন্যতম হলো হবিগঞ্জের এই রূপাইছড়া বাগানটি।
পশ্চিম ও উত্তর দিকে অবস্থিত দুটি উঁচু টিলা কেটে মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। টিলার গাছগুলো আগেই কেটে ফেলা হয়েছিল। সবুজ বাগানটির আরও কয়েকটি স্থান থেকে গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।
রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দারর জানান, পুটিজুরি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মো. মুদ্দত আলী বাগানের ভেতরের ৩ একর ভূমি নিজের দাবি করে প্রায় ১৯ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন।
পাশাপাশি বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত শ্মশানছড়া জলধারা থেকেও বালু উত্তোলন করছেন। তিনি ছাড়া আরও কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী জলাধারা থেকে যন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন।
রাবার বাগানের বস্তির বাসিন্দা তোরাব আলী বলেন, বাগানের মাটি চুরি ও গাছ লুট চলছে। অরক্ষিত থাকায় যে যেভাবে পারছেন, পাহাড় ও গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ কখনোই কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিরাতে টিলা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। মুদ্দত আলীর মাটি ব্যবসার কারণে ওই এলাকায় ৭ বিঘা আয়তনের একটি খেলার মাঠ, মাঠের পূর্ব দিকে রাবার বাগানের আরও ১০ একর নার্সারি জায়গা ও ১২ ফুট প্রস্থের সড়ক বিলীন হয়ে গেছে।
তবে মুদ্দত আলীর দাবি, তিনি সরকারি কোনো জায়গা থেকে মাটি কাটছেন না, যা কাটা হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা থেকে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়-টিলা কাটা যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বালু উত্তোলনের অনুমোদন রয়েছে তাঁর।
এই আইনের ৪ নম্বর ধারার ‘চ’ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘চা–বাগান, পাহাড় বা টিলার ক্ষতি হইতে পারে, এই রূপ স্থান হইলে, বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না।’
রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক আবদুল বাকী বলেন, গত সেপ্টেম্বরে তিনি এ রাবার বাগানে যোগদান করেছেন। তিনি আসার আগেই এ রাবার–বাগানের সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সরকারি ভূমি থেকে কেন বালু তোলা হচ্ছে, সে বিষয়ে বাগানটির পুরোনো কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে বসে জানার চেষ্টা করছেন জানিয়ে আবদুল বাকী বলেন, তাঁরা জানিয়েছেন, মুদ্দত আলী যে জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করছেন, তা নিজের ভূমি হিসেবে দাবি করছেন।
এ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, রাবার বাগানের সীমানা প্রাচীর না থাকায় বাগানটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। বালু উত্তোলণের কারণে বাগানের টিলাগুলো ধ্বসে গেছে। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো রাবার বাগান।