৩০০ বছরের পুরোনো উজিরদিঘি কোনোভাবেই ভরাট করতে দেওয়া হবে না
কুমিল্লা সার্কিট হাউস ও জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনের লাগোয়া ৩০০ বছরের পুরোনো উজিরদিঘি কোনোভাবেই ভরাট করতে দেওয়া হবে না। জলাধার আইন লঙ্ঘন করে যে বা যাঁরা দিঘির পানি সেচে ভরাটের নীলনকশা করছেন, তাঁদের প্রতিহত করা হবে। কুমিল্লার মানুষের স্বার্থহানি হয়, এমন কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার উজিরদিঘি পরিদর্শনে এসে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে উজিরদিঘির দক্ষিণ পাড়ে যান। এরপর তিনি ৫ একর আয়তনের এ দিঘির বেশির ভাগ পানি সেচ করে কমিয়ে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
১৫ দিন আগে থেকে শ্যালোইঞ্জিন লাগিয়ে দিঘির চার ভাগের তিন ভাগ পানি কমিয়ে ফেলা হয়। দিঘির স্বত্বাধিকারী কুমিল্লা নগরের একসময়ের ছাত্রশিবিরের নেতা ও বর্তমানে রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথের গাড়ির ব্যবসায়ী মা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মহসিন খান। তিনি তাঁর লোকজন দিয়ে ওই দিঘির পানি সেচের কাজ শুরু করেন।
১৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে পানির সেচকাজ বন্ধ করে দেন। এরপরও রাতে রাতে পানি কমানো হয়। সর্বশেষ গত রবিবার দুপুরে দিঘির দক্ষিণ পাড় থেকে সেচযন্ত্র সরিয়ে নেয় প্রশাসন। দিঘির পশ্চিম পাড়ে জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবন, উত্তর পাড়ে কুমিল্লা সার্কিট হাউস, পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে আবাসিক এলাকা।
এদিকে উজিরদিঘি ভরাটের পাঁয়তারা চলছে এমন খবর গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কুমিল্লার নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা এই দিঘি রক্ষার দাবি জানান। এ অবস্থায় সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা আজ উজিরদিঘি পরিদর্শন করেন।
সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা বলেন, ‘জলাধার আইন লঙ্ঘন করে কোনো দিঘি ও পুকুর ভরাট করতে দেওয়া হবে না। কুমিল্লা আমাদের স্মৃতিবিজড়িত শহর। এই শহরকে ট্যাংকের (পুকুর ও দিঘি) শহর বলা হয়।
আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে দিঘির এক ফুট জায়গাও দখল করা যাবে না। ভূমিদস্যুরা কাদের ছত্রছায়ায় থাকে, তা মানুষ জানে। কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না আমরা। জেলা প্রশাসনকে বলব কুমিল্লা সার্কিট হাউস ও পুলিশ সুপারের বাংলোর নিরাপত্তার কথা ভেবে এই দিঘিকে রক্ষা করুন।’
দিঘির স্বত্বাধিকারী মো. মহসিন খান দাবি করেন, ‘তিনি দিঘির চার পাড়ে ১২ ফুট করে রাস্তা করতে চান। গাছ লাগাতে চান। একই সঙ্গে দিঘির মাঝখানে ভাসমান রেস্তোরাঁ করতে চান।
দিঘির পানি সেচতে হলে প্রশাসনের অনুমতি লাগে, তা আমার জানা ছিল না।’ কিন্তু রাস্তা করতে তো দিঘির কিছু অংশ ভরাট করতে হবে, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘কুমিল্লার উজিরদিঘি ভরাট হবে না। পানি সেচে ভরাটের উদ্যোগ চলবে না। আমরা সেটি ইতিমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছি।’