২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের ক্ষতি ২০২০ সালের তুলনায় ১২% বেশী
২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের ক্ষতি ২০২০ সালের তুলনায় ১২% বেশী হয়েছে। কোভিধ-১৯ এর কারণে বনজমি-সংশ্লিষ্ট পণ্যাদির চাহিদা কমে যাওয়ায় পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় ক্ষতি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।। তবে বিশ্বজুড়ে এত ভয়াবহ মহামারীও বন উজাড়ের গতিকে তেমনভাবে থামাতে পারেনি।
দ্যা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে ২০২০ সালে ৪২.২ মিলিয়ন হেক্টর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন হারিয়ে গিয়েছে। দ্যা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ প্রতিদিন বিশ্বব্যাপি ভনভূমি পর্যবেক্ষণ করছে এবং এর তথ্য অনুসারে বিষয়টির পরিমাপ করা হয়েছে।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি মূলত নিরক্ষীয় অঞ্চলের চারপাশে অপেক্ষাকৃত ছোট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। তবুও গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি সমস্ত বিশ্বের মোট বনাঞ্চলের ৪৫% অংশ এবং পৃথিবী নামক গ্রহের মোট কার্বন স্টকের ৪০% ধারণ করে। গত বছরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন ক্ষয়ের ফলে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়েছিল, যা ভারতের বার্ষিক কার্বণ নির্গমন গড়ের তুলনায় কিছুটা কম।
ঐতিহাসিকভাবে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চলের বিস্তারের বেশিরভাগ অংশ এসেছে তিনটি দেশ থেকে: ব্রাজিল, কঙ্গো এবং ইন্দোনেশিয়া।
গত বছর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন উজাড়ে ব্রাজিল ছিল শীর্ষে। ২০১৫ সালে আগুনে বিপর্যয়ের পর ইন্দোনেশিয়ায় চতুর্থ বছরে মত গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন হ্রাস পেয়েছে। এরমধ্যে মালয়েশিয়ায় বনের বিস্তৃতি ভাল হয়েছে, তবে ক্যামেরুন ও কলম্বিয়াতে বন উজাড় রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক Nature ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বন পুনরূদ্ধার কর্মসূচীভূক্ত দেশগুলো (চীন, ভারত, জি ৭ দেশ)এ বনজ সম্পদের অধিক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল দেশের বন উজাড়ের ফুটপ্রিন্ট (Deforestation Footprints) এর কোন উন্নতি হয়নি বরং অবনতি হয়েছে।
মানুষ কর্তৃক বন উজাড় করা নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে আইন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি যে, এ দশকের মধ্যে বন ও বনজ সম্পদ আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
সমস্যাটি গত বছর আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা দ্বারা উদ্যেগের সুষ্টি করেছে, আর তা হলো আমাজান বনাঞ্চলের প্যান্টানাল জলাভূমিতে দাবানল। জলবায়ুর পরিবর্তন অঞ্চলটিকে শুষ্ক করে তুলেছে, জলাভূমির বনাঞ্চলকেও আগুনের থাবায় পরিনত করার আশংকা বাড়িয়েছে।
২০১৮ সালে পুরো অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের ভয়াবহ দাবানলের পরে জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু খারাপ বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে- যা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ক্যালিফোর্নিয়ায় এবং দক্ষিণ আমেরিকয় সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। তবে এগুলোতে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। এগুলো মূলত অদ্ভূত দুর্ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং বনজ সম্পদ সংশ্লিষ্ট ব্যবসাটি যথারীতি চলতে থাকে।
বন উজাড়ে কার্বন শোষিত না হওয়ার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে যা ফলস্বরূপ বনভূমিতে দাবানলকে জোরদার করে বনভূমিকেই ধ্বংস করে। এর টিপিং পয়েন্টটি মূলত কোথায় রয়েছে তার বিষয়ে আমাদের কোনও ধারণা নেই। আশা করা যায় কোভিধ-১৯ মহামারী শেষ হওয়ার পরে বন ও বনসম্পদ রক্ষাসহ এর বিস্তৃতির প্রবণতা পুরোদমে ফিরে আসবে।
Source: Earth.Org (Original Writer: Owen Mulhern)