২০২০ সালটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর – বিশ্ব আবহাওয়াবিদদের দাবী
– আশফাকুর রহমান নিলয়
বিজ্ঞানীরা বলছে যে, বিশ্বজুড়ে COVID 19 Coronavirus লকডাউন (Shut down) কার্বণ নিঃসরণকে কমিয়েছে সত্য, তবে দীর্ঘমেয়াদী এ পরিবর্তণ পরিবর্তন প্রয়োজন।
আবহাওয়াবিদরা বলছে যে, তাপমাত্রা পরিমাপ শুরু হওয়ার পর থেকে এই বছরটি হতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। তারা অনুমান করছে যে, ২০২০ সালের তাপমাত্রা ৪ বছর আগে ২০১৬ সালে করা রেকর্ডকে ভাঙার ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ আশংকা রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছে যে, যদিও করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট লকডাউনে আকাশ সাময়িকভাবে পরিস্কার হয়েছে, তবে এতদিন ধরে চলতে থাকা বায়ু দূষণের প্রভাবে পরিবর্তিত জলবায়ুকে শীতল করতে এটি তেমনভাবে সহায়তা করছে না, এর জন্য প্রয়োজন গভীর ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা।
জানুয়ারী ২০২০ হতে এখন পর্যন্ত বিশ্বে তাপমাত্রার যেভাবে বৃদ্ধি ঘটছে, তা অ্যান্টার্কটিকা হতে শুরু করে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত উষ্ণ তাপমাত্রার পূর্বের রেকর্ডগুলো ভেঙে ফেলছে, অনেক বিজ্ঞানীর নিকট এটি আশ্চর্যের বিষয় কারণ এটি এল নিনোর (El Nino) বছর নয়, যা কিনা সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমন্ডলীয় প্রশাসন (The US National Oceanic and Atmospheric Administration- NOAA) হিসাব করে দেখেছে যে, বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাপ শুরু হওয়ার পর হতে ২০২০ সালটি সবচেয়ে উষ্ণ বছর হওয়ার ৭৫ শতাংশ আশংকা রয়েছে।
মার্কিন সংস্থাটি জানিয়েছে যে, প্রবণতাগুলো ২০১৬ সালের বিশ্ব উষ্ণতম বছরের বর্তমান রেকর্ডকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করছে, সেসময়ে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে তীব্র এল নিনোর কারণে বছরের শুরুর দিকে বেড়ে যায় ও এরপর নিচে নেমে আসে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাটি জানিয়েছে যে, ২০২০ সালটি তাপমাত্রা রেকর্ড করা ৫ বছরের মধ্যে শীর্ষ হওয়ার আশংকা ৯৯.৯ শতাংশ।
নিউইয়র্কে নাসা গড্ডার্ড ইন্সটিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ এর পরিচালক গ্যাভিন স্মিডটের একটি পৃথক হিসাবে পাওয়া গেছে যে, এই বছরের তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার ৬০ শতাংশ আশংকা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় আবহাওয়া সেবা দপ্তর আরও সতর্ক, তারা অনুমান করছে যে, ২০২০ সালে নতুন রেকর্ড হওয়ার ৫০ শতাংশ আশংকা রয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্যের সংস্থাটি বলছে যে, ২০১৫ সালের পর এই বছরটি উষ্ণতার মাত্রাকে বাড়িয়ে দিবে, যা কিনা রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণতম সময়।
বছরের পর বছর, মাসের পর মাস তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়া অস্বাভাবিক আবহাওয়া ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলেছে।
এই জানুয়ারী/২০২০ রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস ছিল (বিশ্ব গড় তাপমাত্রার), যা কিনা অনেক উত্তর মেরুর দেশের রাজধানী শহরগুলোকে তুষারবিহীন রেখেছে।
ফেব্রুয়ারীতে একটি গবেষণা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণে এই প্রথম তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস(৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)রেকর্ড করেছে। গত ২৬/৪/২০২০ তারিখে বিশ্বের অন্য প্রান্ত গ্রিনল্যান্ডে এপ্রিলের তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সে. রেকর্ড করে।
বছরের প্রথম তিন মাসে উত্তাপটি পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়াতে সবচেয়ে বেশি ছিল, এসময়ে তাপমাত্রা গড় তাপমাত্রার তুলনায় ৩ ডিগ্রি সে. বেশি ছিল।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ অঞ্চলগুলোতে অতিরিক্ত গরম অনুভূত হয়। সর্বশেষ গত ২৫/৪/২০২০ তারিখে জাতীয় আবহাওয়া সার্ভিস এর তথ্য অনুসারে, লস অ্যাঞ্জেলস শহরটিতে তাপমাত্রা এপ্রিলের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রি সে. পৌঁছেছে। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায়ও উত্তাপের রেকর্ড স্পর্শ করেছে।
যুক্তরাজ্যে প্রবণতাটি তেমন নয়। দেশটির কর্ণওয়াল, ডাইফেড ও গুইনেডে রেকর্ড করার সাথে সাথে এপ্রিলের জন্য দৈনিক তাপমাত্রা ৩.১ ডিগ্রি সে. ছিল, যা কিনা গড় তাপমাত্রার বেশি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিষয়ক বিজ্ঞানী কার্সটেন হাউস্টেইন বলেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রাক-শিল্প স্তরের ওপরে ১.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি হচ্ছে।
তিনি বলেন যে, তার অনলাইন ট্র্যাকার তথ্যের ব্যবধান থাকার কারণে তুলনামূলক রক্ষণশীল স্তরের ১.১৪ ডিগ্রি সে. উষ্ণায়ন দেখায়, তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার পরে তা ১.১৭ ডিগ্রি বা তারও বেশি হবার আশংকা রয়েছে।
যদিও COVID 19 মহামারী নতুন নিঃসরণের পরিমাণকে সাময়িকভাবে হ্রাস করেছে। কার্সটেন হাউস্টেইন বলেন যে, বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলো তৈরি হওয়া একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
হাউস্টেইন বলেন যে, “জলবায়ু সংকট অবিরামভাবে অব্যহত রয়েছে।” তিনি বলেন যে, “কার্বণ নিঃসরণ এই বছরে কমে যাবে ঠিকই, তবে এর ঘনত্ব বেড়েই যাবে। বায়ুমন্ডলীয় গ্রিণহাউজ গ্যাসের স্তর(GHG levels) তৈরিতে কোনো ধীরগতি লক্ষ্য করার পক্ষে আমরা খুবই অনুপযোগী।
কিন্তু আমাদের পছন্দগুলোকে নিয়ে পুনর্বিবেচনা করার এবং পরিবহন ও জ্বালানী উৎপাদন রোধে আরও টেকসই উপায়ে (উদ্দীপনা, কর, কার্বণ মূল্য ইত্যাদির জন্য) অনুঘটক হিসেবে COVID 19 এর বর্তমান সংকটকে ব্যবহার করার অনন্য সুযোগ রয়েছে।”
যুক্তরাজ্যের জাতীয় আবহাওয়া সেবা দপ্তর এর জলবায়ুর মূখপাত্র গ্রাহাম ম্যাডেজ এর আকুতি ছিল যে, ”বিজ্ঞানের প্রতি নির্ভরতা ও বিশ্বাস রেখেই সরকারসমূহ ও সমাজকে মানব জাতীর পরবর্তী সংকট- বিশ্ব জরুরী সমস্যা: ‘জলবায়ুর পরিবর্তণ’ মোকাবেলায় এখনই যথাযথ কার্যক্রম শুরুর বীজ রোপন করতে হবে।”