সেন্টমার্টিন সৈকতে প্লাস্টিকের আগ্রাসন
প্রতিবছর কয়েক লাখ পর্যটক সমুদ্রস্নানে যান সেন্টমার্টিনে, তারা সুখস্মৃতি নিয়ে ফেরেন, রেখে আসেন প্লাস্টিকের বোতল আর পলিথিন। ভ্রমণের সেই সুখস্মৃতি সময়ের পরতে ঝাপসা হয়ে আসে, কিন্তু প্লাস্টিক তো পচে না! ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের স্তর জমে এখন হুমকির মুখে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রবাল।
গতবছর আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের এক সমীক্ষা প্রতিবেদেন বলছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে এ দ্বীপে প্রবালের আচ্ছাদন ১ দশমিক ৩২ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে শূন্য দশমিক ৩৯ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। প্রবাল প্রজাতি ১৪১টি থেকে কমে ৪০টিতে নেমেছে।
সম্প্রতি পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে দ্বীপটি থেকে ৭৪০ কেজি প্লাস্টিক এবং পচনশীল নয় এমন বর্জ্য অপসারণ করেছে ফেইসবুকের ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ক গ্রুপ ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ (টিওবি) এর কর্মীরা।
সেন্ট মার্টিন থেকে কুড়িয়ে আনা সেই ৭৪০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য নন-বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য দিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে একটি ভাসমান বার্জ, যার মূল উদ্দেশ্য সচেতনতা তৈরি করা।
সেন্ট মার্টিনে প্লাস্টিক বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য উৎসাহ যোগাতে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীদের বানানো বিনসেন্ট মার্টিনে প্লাস্টিক বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য উৎসাহ যোগাতে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীদের বানানো বিনটিওবির গ্রুপ অ্যাডমিন নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ট্যুরিস্টরা যে পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে, এই দ্বীপটি সেই ভার আর নিতে পারছে না।
আমরা দেখেছি প্রবালের উপরেও প্রচুর প্লাস্টিক জমে আছে। যেগুলো পাঁচ-সাত বছর আগে ফেলা হয়েছে। এর ফলে প্রবালগুলো মরে যাচ্ছে। যদি এভাবে প্রবালগুলো মারা যেতে থাকে, তাহলে এখানে মাছও আসবে না। এর ফলে এই দ্বীপে মানুষের বসবাসও হুমকির মুখে পড়বে।
সেন্ট মার্টিনের স্থায়ী বসবাসকারীদের একটি বড় অংশের মূল পেশা মাছ ধরা। কিন্তু তারা নিজেরাও এসব বিষয়ে তেমন সচেতন না। তাই সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীদের এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন মোর্শেদ।
তিনি বলেন, “আমাদের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন আস্তে আস্তে দূষিত হয়ে ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। আর কয়েক বছরের মধ্যে এ দ্বীপটিকে আমরা হারিয়েও ফেলতে পারি। কিন্তু কেউই এই ব্যাপারটাতে ফোকাস করছে না।”