26 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ১০:৩২ | ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশ গবেষণা

সুমেরুতে সর্বগ্রাসী দাবানল, প্রথমবার রেকর্ড কার্বন ডাই অক্সাইডে বিপন্ন পরিবেশ!

সর্বগ্রাসী দাবানলে উত্তর মেরুর আর্কটিক অঞ্চল বা সুমেরুর বিপুল-বিস্তীর্ণ আগুন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত বছরের মতো এ বারও ভয়ংকর আগুনের মুখোমুখি হয়েছে উত্তর মেরুর সর্বশেষ অঞ্চল। রিপোর্ট বলছে, এই দানবীয় অগ্নিকাণ্ডের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বার এক-তৃতীয়াংশ বেশি কার্বন বায়ুমণ্ডলে নির্গমন হয়েছে।

ইউরোপের কোপারনিকাস বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ পরিষেবা (Atmosphere Monitoring Service) বা CAMS-এর রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ছ-মাসে আর্কটিক সার্কল বা সুমেরু বৃত্তে ২৪৪ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়েছে। যেখানে ২০১৯ সালের গোটা বছরে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ১৮১ মিলিয়ন টন।

CAMS-এর বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী মার্ক পারিংটন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এটা জেনেছি উত্তর অক্ষাংশে জলবায়ু এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনের হার বিশ্ব-গড় (global average)-এর তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ দ্রুত গতিতে বেড়েছে। কিন্তু, এখন আমরা দেখছি এই পরিবর্তনটা আরও দ্রুত হারে হচ্ছে।

গ্লোবাল কার্বন প্রোজেক্টের সর্বশেষ ডেটা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে স্পেন, মালয়েশিয়া, মিশর বা ইউক্রেনের মতো দেশগুলি জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে যে পরিমাণ কার্বন বাতাসে নিঃসরণ করেছে, আর্কটিক অগ্নিকাণ্ডের জেরে (এখনও যে আগুন জ্বলছে) প্রথম ছ-মাসে সেই সমতুল্য কার্বন বাতাসে মিশেছে।

কোপারনিকাসের তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ার সাখা প্রজাতন্ত্রে। তবে, উত্তর কানাডা ও আলাস্কাতে আগুনের ক্রিয়াকলাপ গত বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। সাইবেরিয়ার আগুনের জেরে হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আয়তেন যা কানাডার এক তৃতীয়াংশেরও সমান।

উত্তর মেরু অর্থাৎ আর্কটিক অঞ্চলে তাপমাত্রা হঠাত্‍‌ অনেকটা বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানকার বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। ‘জোম্বি ফায়ার’-এর আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের ছিলই। যারা হলিউড সিনেমার ভক্ত, তাঁরা এই ‘জোম্বি’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। নানা সিনেমা, কাহিনি, ভিডিয়ো গেমে ফিরে এসেছে এমন ভয়ংকর অ্যাডভেঞ্চার। তবে ‘জোম্বি ফায়ার’ মোটেও রোমাঞ্চকর নয়। বরং তা পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক। ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, অত্যাধিক গরমে বন জঙ্গল পুড়ে যাওয়ার ঘটনার কথা আমরা জানি। সহজ ভাষায় যাকে ‘দাবানল’ বলে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখলে মনে হবে আগুন নিভে গিয়েছি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তখনও পুড়ে চলেছে বন। অনেক সময় সেই শিখা মাটির নীচেও চলে যায়। ফলে খালি চোখে দেখা না গেলেও আগুনের উপস্থিতি থাকে। সবচেয়ে চিন্তার, রোদ-শীত কিছুতেই এই আগুন নেভে না। এই অবস্থাই হল ‘জোম্বি ফায়ার’।

সুমেরু বৃত্তের উত্তরে আমাদের এই পৃথিবীটা কয়েকশো ফুট গভীর বরফে জমাট বাঁধা। ৯০ লক্ষ বর্গমাইলের এই বরফের আস্তরণ গ্রীষ্মকালে গলে ছোট হয়ে আসে, শীতে জমাট বেঁধে আবার আগের চেহারা নেয়। কিন্তু পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ সুমেরুর বরফ নজিরবিহীন ভাবে গলছে। নাসা বিজ্ঞানীদের হিসাবে প্রতিবছর সুমেরু অঞ্চল গড়ে প্রায় ২১ হাজার বর্গমাইলের বরফ হারাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের আগেই গ্রীষ্মকালে সুমেরু মহাসাগর সম্পূর্ণ বরফমুক্ত হয়ে পড়বে। অনুমান, এই অবস্থাটা প্রথম ঘটবে ২০৩৬ সালে। বরফ গলা সংক্রান্ত এ পরিবর্তনটা আমাদের কল্পনার চেয়েও দ্রুতগতিতে ঘটবে।

সুমেরুর পার্মাফ্রস্ট বা চিরহিমায়িত অঞ্চল অপ্রত্যাশিত দ্রুতগতিতে বিলুপ্ত হলে প্রতিবছর অতিরিক্ত কয়েক’শো কোটি টন মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে গিয়ে মিশবে। তার পরিণতিতে আরও উত্তপ্ত হবে পৃথিবী। চিরহিমায়িত অঞ্চলে একসময় যেখানে বছরে মাত্র কয়েক ইঞ্চি বরফ গলত সেখানে এখন হঠাৎ করে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১০ ফুট পর্যন্ত বরফ গলে যেতে পারে। এতে চিরহিমায়িত অঞ্চল বলে পরিচিত এলাকায় সৃষ্টি হবে জলাভূমি। এতে ভূ-গর্ভে আটকে থাকা ১৬০০ গিগাটন কার্বনের নির্গমন ত্বরান্বিত হবে।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার প্রতি এক ডিগ্রি বাড়লে পার্মাফ্রস্ট বা চিরহিমায়িত অঞ্চল থেকে কার্বন ও মিথেনের নির্গমন কয়েক বছর আগেও যতটা হবে বলে ভাবা হয়েছিল তার দ্বিগুণ বা তিনগুণ হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যদি আমরা না কমাই, তাহ লে কয়েক দশকের মধ্যে পার্মাফ্রস্ট বা চিরহিমায়িত অঞ্চল হয়ে দাঁড়াবে চিনের মতোই গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের বৃহত্তম উৎস।

গত বছর জুলাই মাসে উত্তর মেরুতে কী হারে বরফ গলছে, তা দেখে বিশ্বে উষ্ণায়ন সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়। মেরু অঞ্চলের আশপাশের দেশগুলি বরফ গলার ওপরে নজর রাখে। কলোরাডোর ন্যাশনাল শো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এর আগে ২০১২ সালের জুলাই মাসে এই পরিমাণে বরফ গলেছিল। জুলাইয়ের তাপপ্রবাহে আলাস্কা, কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডে তাপমাত্রা বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। ফলে বরফ গলেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

গত তিন দশক ধরেই মেরু অঞ্চলে বরফ গলছে দ্রুত। প্রতিদিন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ২০ হাজার কিলোমিটার অঞ্চলের বরফ। উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্কটিক অঞ্চলে বরফ গলতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরের শেষে ঠান্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে বরফ জমাট বাঁধে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের একটি তথ্য বলছে, গত বছর শুধু জুন মাসে ১০০ টি জায়গায় বনভূমিতে আগুন লেগেছে।

CAMS জানাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে এখনও একাধিক জায়গায় আগুন জ্বলছে। কলোরাডোতে আগুনের তীব্রতা এবার ২০০৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অগস্টে যে গড়, তার তুলনায় বেশি। এদিকে ক্যালিফোর্নিয়াতেও কিন্তু অগস্টের মাঝামাঝি থেকে অগ্নিকাণ্ডের জেরে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন শুরু হয়েছে। বছর শেষ হাতে এখনও চারটে মাস। এই অবস্থায় ব্রাজিলের অ্যামাজনে গত বছরের মতো ভয়ংকর আগুন লাগে কি না, তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সূত্র: এই সময়

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত