সুন্দরবন রক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের এক পরিবেশপ্রেমী
নির্বিচারে গাছকাটা, নদীতে বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন ধ্বংসের মুখে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল৷ সন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে কঠোর চেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গের এক পরিবেশপ্রেমী৷
১২ বছরে সাড়ে ছয় লক্ষ ম্যানগ্রোভ রোপণ করেছেন ‘উমাশঙ্কর মণ্ডল’ যিনি পেশায় ভূগোলের শিক্ষক ৷ পেশায় শিক্ষক হলেও সবাই কাছে ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’ নামে পরিচিত৷ নাম ‘উমাশঙ্কর মণ্ডল’৷ গত ১২ বছর ধরে সাড়ে ছয় লক্ষ ম্যানগ্রোভ রোপণ করেছেন তিনি৷ ২৬ জুলাই আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবসের প্রাক্কালে ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’ বললেন তাঁর পরিকল্পনার কথা৷
আইলা, আমফান ও তার পরবর্তী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সুন্দরবনের মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করেছে৷ এমন দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পরিবেশবিদরা বারবারই ম্যানগ্রোভ লাগানোর কথা বলছেন৷ খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ম্যানগ্রোভ রোপণের উপর জোর দিয়েছেন৷
কিন্তু এসবের বহু আগে থেকেই মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের উমাশঙ্কর মণ্ডল ম্যানগ্রোভ রোপণ এবং পরিচর্যা করে চলেছেন৷ এ লক্ষ্যে ৪২ বছরের উমাশঙ্করের ‘পূর্বাশা ইকো হেল্পলাইন সোসাইটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তোলেছেন৷ স্থানীয়দের সহযোগিতায় ম্যানগ্রোভ রোপণের আদর্শ মডেল গড়ে তোলার পাশাপাশি এলাকার আর্থ সামাজিক চিএ পাল্টে দিয়েছেন ম্যানগ্রোভ ম্যান৷
উমাশঙ্কর বাড়ি সুন্দরবনের গোসাবার সাতজেলিয়া দ্বীপের চরঘেরিতে৷ ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর তিনি পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হন৷ সেসময় নদীতে ভেসে আসা ম্যানগ্রোভের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি৷ স্থানীয় ২২০ জন মানুষকে একত্র করে বীজ এবং গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন৷
উমাশঙ্কর বলেন,‘‘ম্যানগ্রোভ লাগানো ও পরিচর্যা দীর্ঘমেয়াদি কাজ৷ শুধুমাএ ভাটার সময়েই গাছ লাগানো যায়৷ প্রথমে সাড়ে ১০ হেক্টর জায়গাতে আমরা গাছ লাগাই৷ প্রাকৃতিকভাবে সেগুলি এখন বেড়ে চারগুণ হয়েছে৷’’
বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের উমাশঙ্কর বরাবরই অর্থনৈতিক উন্নতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন৷ রাজকাঁকড়া, চিংড়ি, ভেটকি, ঝিনুক, সাপ ইত্যাদি বিভিন্ন জলজ প্রাণিদের বাসস্থান মানুষের অত্যাচারে ধ্বংস হতে বসেছিল৷
ম্যানগ্রোভ সৃজনে প্রাণিকুলের বসবাসের পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়ে আদতে জনজাতির অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করছেন উমাশঙ্কর৷
ম্যানগ্রোভ লাগানোর জন্য তিনি যে মডেল তৈরি করেছেন সেটাও বেশ বৈচিত্র্যময়৷ স্থানীয় দরিদ্রদের দিয়ে তিনি ম্যানগ্রোভ লাগানোর প্রকল্পটি এগিয়েছেন৷
বিনিময়ে সেই মানুষদের হাতে শীতের কম্বল, স্যানিটারি ন্যাপকিন কিংবা পুজোর জামাকাপড় তুলে দিয়েছেন৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন৷ শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছেন বইখাতা৷
এত বড় কাজে কীভাবে অর্থ জোগাড় হয়? ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ ব্যক্তি পর্যায়ের ছোট ছোট অনুদান সংগ্রহ করে তহবিল গড়ে তোলেন তিনি৷