27 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ৭:১২ | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
সাভারের চামড়া শিল্পের তরলবর্জ্য পড়ে হুমকিতে ধলেশ্বরী নদী
পরিবেশ দূষণ

সাভারের চামড়া শিল্পের তরলবর্জ্য পড়ে হুমকিতে ধলেশ্বরী নদী

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর তরল বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে ধলেশ্বরী নদীর অবস্থা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। শিল্পনগরীর প্রায় ৪ হাজার এবং নদী তীরবর্তী এলাকার আড়াই লাখ বাসিন্দা দূষণের শিকার হয়েছেন।এ ছাড়া তরল বর্জ্য শোধনে অব্যবস্থার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি এবং আশপাশের নদ-নদী ও জলাশয় মারাত্মক দূষণের মুখে রয়েছে।

চামড়া শিল্পের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) পরিশোধনের ক্ষমতা দৈনিক ২৫ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য। সাভার শিল্পনগরীর সব ট্যানারির উৎপাদন শুরু হলে সেখানকার তরল বর্জ্যের পরিমাণ হবে দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ঘনমিটার। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সিইটিপি দিয়ে সম্পূর্ণরূপে তরল বর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে না। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর বর্তমান সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণে সুপারিশ জানিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে এ হিসাব উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া কঠিন বর্জ্যরে জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের কথা থাকলেও এখনো তা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে ট্যানারির কঠিন বর্জ্য প্রকল্প এলাকায় দূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।এই তরল বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে পড়ে নদীর পানি ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খুবই অল্পসংখ্যক ট্যানারি নিজেদের অস্থায়ী ডাম্পিং ইয়ার্ডের মধ্যে কঠিন বর্জ্য রাখছেন। এ ছাড়া সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি না হওয়ায় বেশির ভাগ ট্যানারি তাদের কঠিন বর্জ্য আশপাশের এলাকায় ফেলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর অন্যতম কারণ ছিল পরিবেশদূষণ। সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থাপনের অন্যতম শর্ত ছিল শোধনাগারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সরকার নির্মাণ করে দেবে। কিন্তু সময়ক্ষেপণ ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এগুলোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে কারখানার মালিকরা চাইলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না।

গতকাল সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত ট্যানারি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, পুরো ট্যানারির পাঁচটি মুখ দিয়ে সরাসরি ধলেশ্বরী নদীতে পড়ছে ট্যানারির বর্জ্যরে দূষিত পানি। সাভার ট্যানারির সিইটিপির খুব কাছেই রয়েছে অস্থায়ী বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন, যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা ট্যানারির সব ধরনের বর্জ্য ফেলেন। বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানের বাইরেও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আর এই বর্জ্যের পানিও সরাসরি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরী নদীতে।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, ডাম্পিং ইয়ার্ডের তরল বর্জ্য সরাসরি ধলেশ্বরী নদীতে নির্গমন হচ্ছে না। তবে ক্রোমিয়াম মিশ্রিত চামড়া ও তরল বর্জ্য থেকে সংগৃহীত বিষাক্ত ক্রোম কেক খোলা জায়গায় সংরক্ষণের ফলে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডাম্পিং ইয়ার্ডে গরু-মহিষের বিভিন্ন পচনশীল অংশ ফেলে দেওয়ার ফলে দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া মশা, মাছি ও অন্যান্য পোকা-মাকড় জমা হওয়ায় এখানকার পরিবেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে সৃষ্ট কঠিন বর্জ্য (তরল বর্জ্যরে সঙ্গে ক্রোম ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশ্রিত চর্বি, চামড়ার কাঁচা টুকরা, শিং, পশম, হাড়ের টুকরা, চামড়ায় মিশ্রিত বালু ইত্যাদি) পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ, অনুমোদন বা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে কঠিন বর্জ্য অপরিকল্পিত উপায়ে সংগ্রহ করে তা পার্শ্ববর্তী সলিড ওয়াস্ট ডাম্পিং ইয়ার্ডের চারপাশে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে কঠিন বর্জ্যরে সঙ্গে ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশ্রিত তরল বর্জ্য দীর্ঘদিন জমে থাকার ফলে দূষিত তরল বর্জ্যে ভূগর্ভস্থ পানিসহ পার্শ্ববর্তী নদী দূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্যানারি কারখানা থেকে সৃষ্ট কোনো বর্জ্য প্রকল্প এলাকার বাইরে যাতে না যায়, সে জন্য বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক প্রতিটি ট্যানারি শিল্প কারখানাকে চিঠিও দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বর্তমান সমস্যা সমাধানের সুপারিশে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ট্যানারিতে স্থায়ীভাবে তিন ধরনের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি ট্যানারি থেকে সৃষ্ট ক্রোম ও সাধারণ তরল বর্জ্য সিইটিপিতে নির্গমনের জন্য পৃথক পাইপ বা ড্রেন লাইন নির্মাণ ও বাস্তবায়নের জন্য বিসিককে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ট্যানারিতে সৃষ্ট তরল বর্জ্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সংরক্ষণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাঙ্ক নির্মাণ করতে হবে। বিসিক এলাকায় বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য তৈরি ড্রেনেজ লাইনে কোনোভাবেই ট্যানারির সৃষ্ট তরল বর্জ্য প্রবেশ করানো যাবে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই স্থানটি ট্যানারির বর্জ্যে ভরে উঠলে রাতের আঁধারে খুলে দেওয়া হয় ভাগাড়ের নদী তীরবর্তী অংশ। এতে দূষিত আবর্জনার সবকিছু গিয়ে পড়ে ধলেশ্বরীতে। এ ছাড়া দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে আশপাশের মানুষদের জন্যও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে স্থানটি। ট্যানারির কর্মকর্তা-শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু যে নদী দূষণ হচ্ছে তা নয়। ট্যানারির ময়লার দুর্গন্ধে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় প্রকল্প এলাকা পানি আর কাদায় মিশে একাকার হয়ে যায়। এ সময় ট্যানারি বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে ভেসে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

বালিয়াপুরের প্রকল্প এলাকার পাশেই থাকেন সাভারের একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, এই চামড়া নগরী এখন স্থানীয়দের কাছে অভিশাপের মতো। দিন যত যাচ্ছে প্রকল্প এলাকার চারপাশে দূষণের মাত্রা তত বাড়ছে। বুড়িগঙ্গা রক্ষা করার জন্য ট্যানারি নেওয়া হলো সাভারে। কিন্তু সাভারে গিয়েও নষ্ট করা হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। প্রকল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গাফিলতি তো রয়েছেই।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত