38 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৪:২৩ | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
সাগর অফুরন্ত নিয়ামতের ভান্ডার 
পরিবেশ গবেষণা পরিবেশ বিজ্ঞান পরিবেশ বিশ্লেষন মো. মিকাইল আহমেদ

সাগর অফুরন্ত নিয়ামতের ভান্ডার 

সাগর অফুরন্ত নিয়ামতের ভান্ডার

মো. মিকাইল আহমেদ (Md. Mekail Ahmed)
শিক্ষার্থী, আইইসিএমএবি, ঢাকা।

সমুদ্র থেকে পাওয়া শক্তি চিরন্তন। সমুদ্রের একটি আশ্চার্য দিক আছে যাতে মানুষের জীবনে অনেক উপকার হয়। প্রতিদিনের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী খেতে পারি বা বিক্রি করতে পারি। যেমন মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, মুক্তা এবং আরও অনেক কিছু।

এক দেশ হতে অন্য দেশে পণ্য পরিবহনে প্রয়োজন একটি সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর সে কাজটাকে সহজ করে দিয়েছে সমুদ্র বা জলপথ। অন্যদিকে আকাশপথে বা সড়ক পথে পণ্য পরিবহন খুবই ব্যয়বহুল ও ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার। এদিক থেকে চিন্তা করলে সাগর মানুষের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ।

আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়কে সহজ করে দিয়েছে জলপথ। অথচ প্রকৃতির কল্যাণে নিয়োজিত এই সমুদ্রের উপর মানুষ নির্বিচার অত্যাচার করে চলেছে প্রতিনিয়ত। নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্যে দূষিত হয়ে চলছে সাগরের পানি। এতে ব্যাহত হচ্ছে সমুদ্রে মৎস্য উৎপাদন।

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ কমে গিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে চোখ জুড়ানো প্রবাল ও সমুদ্রের সামগ্রিক পরিবেশ। সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। সামুদ্রিক পরিবেশের উপর মানুষের নির্বিচার অত্যাচারের কুপ্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নেও।

সাগর রহস্যের আধার

বর্তমান জামানা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের তুঙ্গে রয়েছে। এমন এমন বিচিত্র সব বিষয় বস্তু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ জানতে সক্ষম হয়েছে যা কয়েক শতাব্দী আগেও যা ছিলো মানুষের কাছে কল্পনাতীত। যা কিছু মানুষের কাছে আজও অজানা তা মহান সৃষ্টিকর্তার নখদর্পণে।

কৌতূহলী মানুষের দৃষ্টি এবং একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কখনোই এক নয় যদিও চোখের পাওয়ার একই। সাগর তীরে কিছু মানুষ ঘুরতে যান শুধু চিত্ত বিনোদনের জন্য। কিন্তু কিছু অনুসন্ধানী মানুষ যায় অজানাকে জানতে, অজানাকে জানাতে, কৌতূহল মেটাতে। সাগর কেন এত অপরুপ, কী তার রহস্য তা মানুষকে জানতেই হবে।

এই জানার আগ্রহ মানুষের ভিতর জাগিয়ে তোলে অনন্ততর পিপাসা। শুধু সাগরের ঢেউ দেখলে কি চলে? নাকি সাগরতীরে কোনো মানবীর আলতা রাঙা পা ভেজানো  অথবা একটু প্রশান্তির গোসল, বিচিত্র সব শামুক-ঝিনুক-মুক্তা কুড়ানো? এতেও কি মন ভরে? নাহ একদমই নয়।

মানবী প্রিয়ার যৌবন হয়তো একসময় চলিয়া যায়, কিন্তু সাগরতো অনন্ত যৌবনা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই পদ্মা নদীর মতোই। যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী কৌতুহলী মানুষদের পিপাসা মিটিয়ে চলেছে কালের নীরব সাক্ষী এই সাগর- নদী।

সাগরতলে কি আছে তা দেখার জন্য মানুষ ছুটে চলেছে গহীন সমুদ্রের তলদেশে। সাগরজলে রয়েছে  বিচিত্র সব প্রাণীর অভায়ারণ্য। আরো আছে স্বর্ণের খনি, হিরা, মণি-মুক্তা-জহরত। চোখ জুড়ানো, মন জুড়ানো সব প্রবাল।

এক সময় যেসব শৈবালকে মানুষ নিছকই সামুদ্রিক আবর্জনা মনে করত, এখন সেই সব শৈবাল শোভা পাচ্ছে মানুষের খাবার টেবিলে। শৈবাল পুষ্টি জোগাচ্ছে মানুষের দেহে। বাড়াচ্ছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

সাগরতলে শুধু স্বর্ণের খনি খুঁজেই মানুষ ক্ষান্ত হয়নি, মানুষের কৌতূহলের চোখ পড়েছে সাগরতলে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র আছে কিনা সেদিকেও। তেল ও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেই মানুষ বসে থাকেনি, বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হয়েছে তাদের তেল ও গ্যাসের ব্যবসা।

ধনীদের কাতারে নাম লিখিয়েছে কয়েকটি দেশ শুধু তেল,গ্যাস আহরণ, মজুদ ও বিক্রি করে। রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠেছে তাদের অর্থনীতি। মরুভূমির সেই ছোট দেশগুলোও এখন বিশ্বের প্রভাবশালী অর্থনীতির দেশ যারা কিনা এক সময় মরুর বুকে উট চড়াতো।

নিঃসন্দেহে আল্লাহর পরিকল্পনাই উত্তম। মানুষ যা এখনো কল্পনা করতে পারে না, মহান আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই সেই সব গোপন রহস্য সমগ্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন। তাই বলা যায়, সমুদ্র বিচিত্র সব রহস্যের আধার।

অদূর ভবিষ্যতে, সমুদ্র হতে হয়তো এমন কিছু আবিষ্কার হবে যা আমরা এখনো কল্পনাই করতে পারছিনা, অপেক্ষা শুধু সময়ের। আল্লাহ কুরআনে বলেন, “তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যেসব রং-বেরঙের বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছি, সেগুলোতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তা-ভাবনা করে।

তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাংস খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযান সমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর।” (সূরা নাহল, আয়াত ১৩-১৪)

সাগর চিন্তাশীলদের গবেষণাগার

মহাবিশ্বের মহাস্রষ্টা আল্লাহ। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাবিদ। এ বিশ্ব চরাচরের সবকিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। পৃথিবীর সর্বত্র তিনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন অগণিত নিয়ামতরাজি। উদ্দেশ্য এটাই যে মানুষ তাঁর সব নি‘আমত ভোগ করবে আর একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে।

পরকালের অনন্ত জীবনের সুখ সন্ধান করবে পার্থিব নি‘আমত কাজে লাগিয়ে। এসব সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম একটি হলো সাগর। সাগর আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি যা মানুষের জন্য অফুরন্ত নিয়ামতের ভাণ্ডার।

স্রষ্টার সৃষ্টির অপার বিস্ময় এ সাগর। সাগর মানুষের মাঝে নিরন্তর কৌতূহল জাগিয়ে রেখেছে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই। এখনো চলছে সাগর নিয়ে মানুষের বিরামহীন গবেষণা ও অনুসন্ধান।

সৈকতে জোয়ার ভাটার দৃশ্য জ্ঞানীদের মনে অনেক ভাবনার উদ্রেক করে। মানুষের মনের আতঙ্ক বেড়ে যায়, যখন সাগরের বিশালাকার ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে লবণাক্ত পানির গতি সামনে বাড়িয়ে দেয় তখন। সমুদ্রে জোয়ার-ভাটা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় মানুষের জীবনের উত্থান-পতনের কথা, দুঃখ-কষ্টের কথা, মানুষ ক্ষণে ধনী, আবার ক্ষণে গরীব হতে পারে সেটা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সাগর হলো বৈচিত্র্য ও বিস্ময়ের অফুরন্ত ভান্ডার। সাগর নিয়ে মানুষ যত গবেষণা করছে ততই জ্ঞান অর্জন করছে। প্রতিনিয়ত চমকপ্রদ সব তথ্য আবিষ্কৃত হচ্ছে। আল্লাহ মানুষের জন্য অফুরান কল্যাণের ভাণ্ডার সুপ্ত রেখেছেন সাগরে। তেল, গ্যাস, সোনাসহ নানাবিধ খনিজ সম্পদ মজুদ রেখেছেন সাগরবুকে।

সমুদ্রে ব্যাপক গবেষণা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে। তাই কুরআনে সাগর নিয়ে চিন্তা-গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্ঠে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তার আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্ঠে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৬৫]

সাগরের অবদান

কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে কিন্তু মানুষ ও পরিবেশের কল্যাণে সাগরের অবদান লিখে শেষ করা যাবে না।

কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডেভিড রবার্টস বলেছেন, “১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে কাতার যখন তার আঞ্চলিক সমুদ্র সীমানায় প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার করেছিল তখন তাদের কর্মকর্তারা হতাশ হয়েছিলেন যে, এটি তেল নয় যা নিকটবর্তী সৌদি আরব এবং কুয়েতের অর্থনীতিকে পরিবর্তন করছে।

প্রথম ২০ বছরের জন্য কেউ এটি চায়নি। কারণ, কেউ এটির জন্য একটি বাজার কল্পনা করেনি। তাই তারা বেশিরভাগই সমুদ্রের নীচে ফেলে রেখেছিল। তারপর প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কল্যাণে ১৯৯০ এর দশকে কাতার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা  এলএনজি (Liquefied natural gas-LNG) শিল্প তৈরিতে বিলিয়ন ডলার ঢেলে দেয় অর্থাৎ বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করে।”

পূর্বে প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহণ করা হত। এর ফলে এ গ্যাস বেশি দূরে বিক্রি করা সম্ভব হতো না। কিন্তু যখন – ২৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করা হয়। তখন গ্যাসটি তরল হয়ে যায় এবং আয়তনে সঙ্কুচিত হয়। যার অর্থ এলএনজি  গ্যাসে রূপান্তরিত হয়।

বিশাল পরিমাণ গ্যাস জাহাজে করে সারা বিশ্বে পরিবহন করা যায়। সেই সময়ে এলএনজিকে একটি ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ণ বাজি হিসাবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু নতুন জ্বালানির বাজার যা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় কম নির্গমন করে, তখন এর চাহিদা এবং বাজারের পরিধি বেড়েছে এবং কাতার এটিকে ঘিরে বড় সাফল্য লাভ করেছে। রবার্টস বলেন, “আপনি বাজারে কাতারের আধিপত্য দেখতে পাচ্ছেন। তারা সর্বোত্তম এবং সস্তার LNG অপারেশন চালু করেছে।”

এটি কাতারের অর্থনীতিতে নগদ অর্থ প্রেরণ করেছে। কাতারের অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। কাতারের ২.৫ মিলিয়ন মানুষকে উপহার দিয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের একটি দেশ যাদের মধ্যে মাত্র ৩ লক্ষ মানুষ কাতারের নাগরিক।

কাতারের রাজধানী দোহা, স্টিল এবং কাঁচের তৈরি গগনচুম্বী সব অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল এবং শপিংমলগুলির বর্তমান চিত্র কাতারের গ্যাস ক্ষেত্রে সাফল্যের জানান দেয় যা একটি পরিকল্পিত বিন্যাসের অঙ্কুরিত ফসল।

দেশের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ফুলে উঠেছে। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক এবং অন্যান্য বৈশ্বিক শহরের বড় বড় কোম্পানিগুলোতে এবং মূল সম্পত্তির অংশীদারিত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে। [1]

গ্যাস হাইড্রেট হল একটি স্ফটিক কঠিন জল এবং গ্যাস দ্বারা গঠিত যা দেখতে বরফের মতো এবং এতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন রয়েছে। গ্যাস হাইড্রেটের আবিষ্কার একটি আশার রশ্মি। বাংলাদেশের কাছে বঙ্গোপসাগরে আবিষ্কৃত বিশাল গ্যাস হাইড্রেট এখন  বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

সেই সঙ্গে কয়েকশ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালের আবিষ্কার বঙ্গোপসাগরকে একটি সম্ভাব্য “সোনার খনি” ভাবা হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব মহা মূল্যবান সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করার সমস্ত সুযোগ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ প্রায় ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (TCF) বরফের মতো হাইড্রেট জমার উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছে যাতে বিপুল পরিমাণ মিথেন রয়েছে।

যদিও COP 26-এ বাংলাদেশ ধীরে ধীরে তার জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে সবুজ শক্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি মসৃণ স্থানান্তর এবং শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আগামী দুই দশকে দেশটির এখনও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন।

উদাহরণ স্বরূপ, ভারত বঙ্গোপসাগরে বিশেষ করে কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকায় বিশাল গ্যাস হাইড্রেট রিজার্ভের সম্ভাবনাও নিশ্চিত করেছে। ভারতের অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশনের তথ্য বলছে দেশটিতে প্রায় ২৮ টিসিএফ মজুদকৃত মোট ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।

এর মধ্যে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮.২৪ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে।বর্তমানে বাংলাদেশে ২০টি গ্যাসক্ষেত্র চালু রয়েছে যেখানে প্রতিদিন ৩,৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট mmcf) জাতীয় চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন মাত্র ২,৩০০ টিসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

গত দুই দশকে কোনো উল্লেখযোগ্য গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের অভাবের বিপরীতে উচ্চ চাহিদার কারণে দেশের নিজস্ব গ্যাস সম্পদ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে তার শিল্প ও বিদ্যুত চালু রাখতে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।

২০১৮ সাল থেকে সরকার দুটি ভাসমান স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের মাধ্যমে কমপক্ষে ৫০০  এমএমসিএফ/ডি এলএনজি আমদানি করছে। এই কারণেই তেল এবং গ্যাসের জন্য গভীর সমুদ্র অন্বেষণ করা তার অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গভীর উপসাগরে তেল ও গ্যাসের আবিষ্কার

বঙ্গোপসাগরে প্রচুর তেল ও গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে ভারত ও মিয়ানমার গত দুই দশক ধরে সম্পদের ব্যবহার করছে। ভারত এখন পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে কূপ খননের মাধ্যমে মোট ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কার করেছে।

এর সবচেয়ে বড় আবিস্কার হল ধীরুভাই ডিপ ওয়াটার ব্লকে – কৃষ্ণ-গোদাবরী অববাহিকায় অবস্থিত বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যবিন্দু, যেখানে ২৫ টিসিএফ গ্যাস রয়েছে। এটি ২০০৯ সাল থেকে প্রতিদিন ২.১ বিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন করছে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্যাস আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে  ২০০৫  সালে  আবিষ্কৃত  দীনদয়াল গ্যাসক্ষেত্র। [2]

সাগরের কান্না

মানুষের মত কণ্ঠস্বর না থাকলেও সাগরেরও তো থাকতে পারে চাপা ক্ষোভ কিংবা অভিমান। একটা সাগরকে কিভাবে গলা টিপে হত্যা করে মানুষ! শুনতে অবাক লাগলেও আসলে এটাই সত্যি।

কারণ, আরাল সাগরের বর্তমান বেহাল দশা এর চাক্ষুষ প্রমাণ। কি নির্মম পরিণতিই না হয়েছে এই আরাল সাগরের! মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে একটা সাগরকে পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে পারে।

হয়তো কাজী নজরুলের মতো এই আরাল সাগরের বেহাল দশায় অন্যান্য সাগরও বলছে অভিমানের সুরে,

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে! [অভিশাপ, কাজী নজরুল ইসলাম]

আরাল সাগর এখন বিস্তীর্ণ মরুভূমি

আরাল সাগর এখন বিস্তীর্ণ মরুভূমি

আরাল সাগর এখন বিস্তীর্ণ মরুভূমি। অথচ একসময় তার বিস্তীর্ণ জলরাশিতে ছিল প্রাণের প্রাচুর্য। তাহলে কি করে শুকিয়ে গেল তার প্রাণ প্রবাহ? নামে সাগর হলেও আরাল সাগর মূলত একটি হ্রদ। বিশালতার কারণে আরবদের কাছে এটি সাগর নামে পরিচিত ছিল।

বর্তমানে কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান এর মধ্যবর্তী স্থানে এর অবস্থান। মধ্য এশিয়ায়ও এর  বিস্তৃতি  ছিলো। ৫০ বছর আগেও আড়াল সাগর ছিল পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম হ্রদ। ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন বছর ধরে বইছিল তার জলধারা। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো আরাল সাগর।

সাগরটি শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানকার ভূ-অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের শুরুর দিকে করা জরিপ অনুযায়ী আরাল সাগরের প্রায় ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। পানির প্রবাহ কমতে কমতে এক সময়ের বিশাল আরাল সাগর সামান্য জলাশয়ে পরিণত হয়।

২০১৪ সালের নাসার প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায় হ্রদটির পূর্বাঞ্চলীয় বেসিনের পুরোটাই শুকিয়ে গেছে। অঞ্চলটি এখন আরালকুম মরুভূমি নামে পরিচিত। আরাল সাগরের দক্ষিণভাগ এখনও মরুভূমির মতো শুষ্ক।

আশার কথা উত্তরাংশ ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে জীবনপ্রবাহ। যে মানুষেরা এক সময় তার বিনাশে মেতেছিল তারাই আবার তার জীবন দানে সহমর্মী হয়ে ওঠে। [3]

পানি ছাড়া গাছপালা তাজা হয় না। পানি ছাড়া মানুষ এবং প্রাণী বাঁচতে পারে না। তাই পানি জীবিত প্রাণীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন উৎস। সাগর-সমুদ্র মানুষের চাহিদার বিশাল অংশের যোগান দেয়।

আল্লাহ সবকিছুকে উদ্দেশ্য করে সৃষ্টি করেছেন। কোনটাই অকেজো নয়। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, যিনি এই মহাবিশ্বকে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এই পৃথিবীর পানিকে বুদ্ধিমানের মতো ব্যবহার করতে হবে।

References

  1. The West’s scramble for gas could enrich and empower tiny Qatar by Ben Hubbard, The New York Times
  2. Big potential in Bay as 17-103 TCF gas hydrates found. https://www-tbsnews-net.cdn.ampproject.org/v/s/www.tbsnews.net/bangladesh/gas-hydrate-found-bay-bengal-353539?
  3. সাগর যেভাবে ধু-ধু মরুভুমিতে পরিণত হল https://www.daily-bangladesh.com/colorful-life/137561.
“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত