সবজি চারা উৎপাদনেই ভাগ্য বদলেছে অনেকের। বেকারত্ব দূর করে তারা এখন ভালো আছেন। গোটা বছর চারা উৎপাদনের পদ্ধতিও শিখে নিয়েছে তারা। সামনে শীত মৌসুম। আর এ কারনেই সবজি চারা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নার্সারি পল্লী খ্যাত শাহ্নগর গ্রামের মানুষেরা।
বাবা-দাদার আদি পেশা নানা রকম ফসলের চাষাবাদ। সময়ের সাথে বদলেছে চাষাবাদের ধরণ। ফসলের পরিবর্তে সবজি চারা উৎপাদনে জড়িয়ে পড়েছেন এ গ্রামের কৃষিজীবি মানুষেরা। বিগত ৩ যুগে শাহ্নগরের এ কর্মযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার ৭-৮টি গ্রামে। বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়সহ দেশের ২৪টি জেলার মানুষ শাহ্নগর গ্রাম থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন। স্বল্পমূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন চারা পাওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে চারার চাহিদা।
সরোজমিনে দেখা গেছে, শীত মৌসুম ঘিরে শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদনে সরব হয়ে উঠেছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহ্নগর ও আশপাশের গ্রামগুলো। ২২০টি সবজি নার্সারিতে নিবির পরিচর্যায় বেড়ে তোলা হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপির গুণগত মানসম্পন্ন কয়েক কোটি চারা। প্রতিকুল আবহাওয়ায় চারা উৎপাদন যাতে ব্যহত না হয় সে জন্য পলিথিনের ছাউনীতে ঢেকে দেয়া হয়েছে নার্সারির বেডগুলো।
বছরে ৫ মাস মাটিতে চারা উৎপাদন কাজ চলে। বাকি সময় নার্সারি শ্রমিকদের কাঁধে চেপে বসে বেকারত্ব। তাই নিজেদের বেকারত্ব ঘোঁচাতে বারো মাস চারা উৎপাদনের আধুনিক কলা-কৌশলও রপ্ত করেছেন শাহ্নগর গ্রামের মানুষেরা। ‘ট্রে-নার্সারি’ স্থাপন করে তারা সারা বছর সবজি চারা উৎপাদন করছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব চারা বাজারজাত শুরু হবে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪ বছর আগে শাহ্নগর গ্রামে সর্বপ্রথম ট্রে-নার্সারি স্থাপন করেন আমজাদ হোসেন নামের এক কৃষক। তার সাফল্য দেখে গ্রামের আলাল, দুলাল, জাহিদুল এবং উজ্জল ট্রে-নার্সারি স্থাপন করেন। রোগ-বালাই অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এবং ফসলের ফলন বেশি হওয়ায় ট্রেতে চারা উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক।
ঐ গ্রামের কৃষকরা জানান, ৫ মাস চারা উৎপাদন শেষে সবজি নার্সারি গুলোতে বছরের বাকি সময় চলে সবজি উৎপাদনের কাজ। হাইব্রিড পেঁপে, টমেটো, মরিচ, শশা, খিরা, শিম, ধনিয়া পাতা, রাধুনি পাতা, বরবটি, বেগুন, গাজর মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, উৎপাদন করছেন। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
শাহ্নগর গ্রামে নার্সারি স্থাপন করে বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি চারা উৎপাদনের জনক ও শাহ্নগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, বেকারত্ব ঘোঁচাতে ১৯৮৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি চারা উৎপাদন শুরু করেন। কিন্তু এ কাজের কলা-কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় লাভের মুখ দেখেননি। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পৃথক পৃথক ভাবে চারা উৎপাদনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং চারা উৎপাদন করে লাভবান হন। এরপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বরং তার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আশপাশের অনেকেই চারা উৎপাদনে জড়িয়ে পড়েন। দিন দিন এ কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন স্থানীয়রা।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে সবজি চারা উৎপাদনের কাজ চলতে থাকায় শাহ্নগর এখন ‘চারার নগর’-এ পরিণত হয়েছে। সেই সাথে নার্সারিগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের। গড়ে উঠেছে সার, বীজ, কীটনাশকের দোকান। দূর-দুরান্ত থেকে চারা কিনতে আসা মানুষের সেবায় গড়ে উঠেছে খাবারের হোটেল। চারা পরিবহণে উপকৃত হচ্ছে রিক্সা-ভ্যান, টেম্পুর চালকরা।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম জানান, শাজাহানপুর উপজেলার শাহ্নগর ও আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ সবজি চারা উৎপাদনে সারাবছর কাজ করে থাকে। তাদেরকে নিয়মিত পরামর্শ ও বিভিন্ন বিষয়ে দেখভাল করে থাকেন কৃষি অফিস। সূত্র: বিড-প্রতিদিন