শুরু হয়েছে সুন্দরবনের বাঘশুমারি
বাঘ গণনার জন্য সুন্দরবনের ৬৬৫টি স্পটে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বাঘশুমারির এ তথ্য প্রকাশ করা হবে আগামী জুনে।
সুন্দরবনের কালাবগি এলাকায় বুধবার ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। উদ্বোধনের পর সাতক্ষীরা রেঞ্জের হলদিবুনিয়া এলাকা থেকে ক্যামেরা স্থাপন শুরু হয়।
সুন্দরবান বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক এবং সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন জানান, বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঘ সংরক্ষণ, বাঘের সংখ্যা ও বর্তমান অবস্থা জানার জন্য শুমারি হয়েছে। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জের ৬৬৫টি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা বসানো হবে।
বন বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গত ২৩ মার্চ ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক মোহসিন বলেন, এর আগে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে একই পদ্ধতিতে বাঘগণনা করা হয়েছিলো। তবে ২০১৫ সালের আগে পায়ের ছাপ দেখে শুমারি করা হতো।
সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরু
গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে কালাবগি ফরেন ফাউন্ডেশনের আওতাধীন খালগুলোর দুইপাশে জরিপ করে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ চলছে। এই খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা হবে গোটা সুন্দরবনে।
আর এখন বনের গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা থাকবে ৪০ দিন। ১৫ দিন পরপর ক্যামেরার ব্যাটারি ও মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করা হবে।
বাঘ গুনতে সুন্দরবনের ৬৬৫টি স্পটে ক্যামেরা বসছে
বাঘ, হরিণ, শূকর বা অন্য কোনো প্রাণী ক্যামেরার সামনে দিয়ে গেলে সেই ছবি এবং ১০ সেকেন্ডের ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধারণ হবে বলে জানান মোহসিন।
মোহসিন আরও বলেন, ‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও খাল সার্ভের কাজ শেষ হলে সব তথ্য-উপাত্ত ঢাকায় বন বিভাগের রিসোর্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইউনিটে পাঠানো হবে। সেখানে পর্যালোচনার পর ২০২৪ সালের জুনে শুমারির ফল ঘোষণা করা হবে।’
প্রকল্প পরিচালক জানান, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু বাঘশুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। শুমারির জন্য সম্প্রতি দুই কিস্তিতে এক কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বন বিভাগ।
শুমারি দলে থাকা বাঘ গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা জানা খুবই জরুরি।
জরিপে যদি দেখা যায়, বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, তাহলে বোঝা যাবে ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। আর যদি দেখা যায় বাঘের সংখ্যা কমেছে, তাহলে বুঝতে হবে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।’
তবে গণনায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এবার বাড়বে বলে ধারণা এই প্রাণিবিদ্যা অধ্যাপকের।
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিলো ১০৬টি।