শহরের পার্কগুলি এখন চড়াই-টুনটুনির কিচিরমিচিরে ভরপুর
করোনা সংক্রমণ রুখতে চলছে কড়া বিধিনিষেধ। সাথে চলছে টানা বর্ষণও। শহরের পরিবেশ এখন অনেকটাই দূষণমুক্ত। ফলে সাপ, গোসাপ ফিরছে শহরের নানা পার্ক, জলাশয়ে। ঝিরিঝিরি বর্ষণমুখর সন্ধায় শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝিঁর ডাক। উড়ছে পাখি।
পাখা মেলছে প্রজাপতি। ছুটছে কাঠবিড়ালি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন একাধিক সংস্থার নজরে এসেছে এই পরিবর্তন। পক্ষীবিশারদ বা কীটপতঙ্গ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাও বলছেন, গতবারের লকডাউনের সময়কার ছবিটাই ফের যেন ধরা পড়ছে। তাঁদের ক্যামেরাবন্দি হয়েছে নানারকম সরীসৃপ, কীটপতঙ্গ। ছবিতে ধরা পড়েছে পাখিরও। আর বনদপ্তর ধরেছে সাপ। তার মধ্যে বিষধর প্রজাতিরও রয়েছে বলে জানা গেছে।
কোভিড (COVID-19) মোকাবিলায় কড়া বিধিনিষেধ চলছে দেশজুড়ে। যানবাহন কম চলায় শহরে দূষণমাত্রা অনেকটাই কমেছে। তার উপর ভরা বর্ষার মরশুম। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে।
একটানা বৃষ্টিতে অনেকটা স্বচ্ছ হয়েছে শহরের পরিবেশ। দূষণের মাত্রা রয়েছে ৭৪–এর মধ্যে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, দূষণের মাত্রা রবীন্দ্র সরোবরে ৪৫, ভিক্টোরিয়া এলাকায় ৬১ এবং বিধাননগরে ৬৩।
দূষণ কমতে থাকায় হারিয়ে যাওয়া কীটপতঙ্গ, সরীসৃপরা সব শহরে ফিরে আসছে। পার্কগুলোতে এখন সাপ, গোসাপ, তক্ষকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। শহরে কাঠবিড়ালির সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে।
সকাল হলে চড়ুই, টুনটুনি, বুলবুলিদের ডাকে ঘুম ভাঙছে শহরবাসীর। পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ বলেন, বর্ষায় দূষণ মাত্রা কম থাকে। বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়াতে দৃশ্যমানতা বেড়ে যায়। রবীন্দ্র সরোবর লেকে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে এখন জলঢোঁড়া, গোসাপ দেখতে পাচ্ছি।
বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রাখতে হলে পরিবেশে (Environment) এদের থাকাটা একান্ত জরুরি। বর্ষায় সরোবরের জল অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। জল পরিষ্কার হতেই লেকে মাছ ও জলজ উদ্ভিদগুলো অক্সিজেন পাচ্ছে। লেকে মাছরাঙাও এখন বেশি দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শহরে কাঠবিড়ালির সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। দূষণ কমায় এখন দক্ষিণ কলকাতায় প্রচুর কাঠবিড়ালি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বাগবাজার, শ্যামবাজার, উল্টোডাঙার বিভিন্ন ছোট পার্কে এবং বি টি রোড লাগোয়া গাছে কাঠবিড়ালির সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে পরিবেশবিদদের দাবি।
বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করেন অভিষেক দাস। তাঁর কথায়, শুধু দক্ষিণ কলকাতা থেকে গত কয়েকদিনে ২৭টি সাপ ধরা হয়েছে। পার্ক, লেক, পুরনো বাড়ি থেকে শাঁখামুটে, কালাচ, কেউটে, চন্দ্রবড়াও মিলেছে। বন দফতরের হাতে সেগুলো তুলে দিয়েছি আমরা।
গত বছর দীর্ঘ লকডাউন পরিবেশের ক্ষতে অনেকটাই প্রলেপ দিয়েছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ বছরও রাজ্যে বিধিনিষেধ করা হয়েছে। ফেরিঘাটগুলো বন্ধ থাকায় নদীতে দূষণ কমেছে। এখন নদীর পানি অনেক স্বচ্ছ। দূষণে গঙ্গায় শুশুক হারিয়ে গিয়েছিল। জলযান বন্ধ থাকায় আবার গঙ্গায় শুশুক দেখা যাচ্ছে। দূষণ কম থাকায় মৎস্যজীবীরা নদীতে ভাল মাছ পাবেন বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, দূষণের জেরে শহরে চড়ুই, ঘুঘু, বাবুই এসব পাখি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কড়া বিধিনিষেধ এবং বর্ষায় পরিবেশে প্রাণ ফিরছে। এখন কলকাতা, নিউটাউন অঞ্চলে বুলবুল, বাবুই, চড়ুই, ঘুঘু, টুনটুনি দেখা যাচ্ছে। এখন কোয়েলের ডাকও শোনা যায়। বর্ষা নামতে শহরে ঝিঁঝিঁ পোকা, জোনাকিরা আসছে।