লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহৃত ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে ইমারত নির্মাণ ও মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে প্রায় ৩০ হাজার ৩৯৫ হেক্টর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পৌরসভা কার্যালয় ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। ৫৭টি গ্রামের বিভিন্ন খাল দিয়ে ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীতে গিয়ে পানি পড়ছে। কিন্তু প্রায় স্থানে খালের অর্ধেক দখল করে প্রভাবশালীরা ইমারত নির্মাণ ও মাছ চাষ করছে। অনেকে আবার বালু ফেলে ভরাট করে বাড়িও নির্মাণ করেছেন। এতে ডাকাতিয়া খালে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ কারণে এলাকার প্রায় ৩০ হাজার ৩৯৫ হেক্টর ফসলি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে জমির ধানসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই কারণে এসব জমিতে কৃষকেরা রবিশস্য, বোরো ধান, সয়াবিনসহ বিভিন্ন শস্য আবাদ করতে পারছেনা।
গত কয়েকদিনের মেঘনার জলোচ্ছ্বাস ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক ও এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তাসহ সিআইপি কর্তৃপক্ষ-অভিযোগ পাওয়ার পরেও খাল দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করেননি। খাল ভরাট করায় ৩০ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। খাল ভরাটকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার ও বুধবার (০১ ও ০২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের নতুন বাজার, মহিলা কলেজ সংলগ্ন, পৌরসভার পশ্চিম কাঞ্চনপুর, কেরোয়া ইউপির লুধুয়া গ্রাম, মালিবাড়ি এলাকা, চরপাতা ইউপির গাজিনগর গ্রাম, চরআবাবিল ইউপির হায়দরগঞ্জের বেড়িবাঁধ এলাকা, উদমারা ও দক্ষিণ চরবংশী ইউপির কয়েকটি গ্রামের বিস্তৃত জমি কয়েক ফুট পানির নিচে রয়েছে।
পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাঞ্চনপুর গ্রামের কৃষক বেনি আমিন ভুঁইয়া বলেন, তিনি তাঁর চার বিঘা জমিতে ধান ও পেঁপের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে সব শেষ হয়ে গেছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, ‘ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীতে প্রবহমান সংযোগ এলাকায় খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এই বিষয়ে অবৈধ স্থাপনা ও বাঁধগুলো ভেঙ্গে দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন শহীদ সরওয়ার্দি বলেন, উপজেলার ৫৭ গ্রামে ৩০ হাজার ৩৯৫ হেক্টর আবাদি ফসলি জমি রয়েছে। শিগগিরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীর সংযোগ খালের বিভিন্ন স্থানের বাঁধ ও স্থাপনা ভেঙ্গে দিতে অভিযান চালানো হবে। সহযোগিতা দিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে।