বনানীর বিটিসিএল খেলার মাঠে ৭১ ফুট লম্বা একটি নৌকা। পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন কোমল পানীয়র বোতল দিয়ে। নৌকার পেছনেই রয়েছে ৩০ লাখ বোতলের একটা স্তূপ। আর সামনেই লেখা রয়েছে, ‘নিজের ঘরের মতো সাজিয়ে তুলি দেশ, আমি তুমি হলে বেশ পরিচ্ছন্ন হবে বাংলাদেশ।’
রাজধানী ঢাকার বনানীর বিটিসিএল খেলার মাঠে গতকাল মঙ্গলবার চোখে পড়ল এমন দৃশ্য । বিজয় দিবস উপলক্ষে মাঠে চলছে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল দিয়ে তৈরি জিনিসের প্রদর্শনী। বিডি ক্লিন নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে দেখানো হচ্ছে এমন প্রদর্শনীর।
গত ১০ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিডি ক্লিনের প্রায় ১৮ হাজার সদস্য সংগ্রহ করেন এই ৩০ লাখ বোতল। এ বিষয়ে সংগঠনটির ঢাকা দক্ষিণের সমন্বয়ক ছন্দা মণ্ডল জানান, ‘৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের বাংলাদেশ। তাঁদের প্রতি সম্মানে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। যে মাটিতে শহীদদের রক্ত, সেই মাটি আমরা প্লাস্টিকের দূষণে দূষিত করতে পারি না।’
মাঠে শুধু বিশাল নৌকা নয়, মাঠে বসেছে আরো চারটি বিশাল বোর্ড। যেখানে একটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, অপরটিতে বাঘের মুখ। অন্য পাশের দুটির একটিতে স্মৃতিসৌধ, আরেকটিতে আছে বাংলাদেশের মানচিত্র। যা বানানো হয়েছে বিভিন্ন বোতল ও বোতলের মুখ দিয়ে। প্রদর্শনীতে আরও রয়েছে বোতলের তৈরি বিভিন্ন খেলনা, গয়না, ঘর সাজানোর নানা উপকরণ। পাশাপাশি চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সচেতনতা কার্যক্রম। তথ্য অনুযায়ী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে ।
মাঠের এক কোণে সংগঠনটির ছেলেমেয়েরা ফেলনা বোতল দিয়ে বানাচ্ছেন আরও বিভিন্ন ধরনের জিনিস। যেখানে বেশির ভাগই বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের বিশেষ কিছুকে তুলে আনা হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে তাঁদের সাথেই বসে আছেন এক বিদেশি। যার নাম লুসি হেস। যিনি কাজ করেন পথশিশুদের নিয়ে। দেখা যাচ্ছে পথশিশুদের নিয়ে বোতল কাটতে পথেই বসে গেছেন লুসি। লুসি হেস বলেন, ‘এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।’
লুসির পাশেই অনেক বোতল নিয়ে বানানো হচ্ছে বড় বড় থাম ও গম্বুজ। যেগুলো দিয়ে বুধবার আরও কিছু তৈরি করা হবে। সংগঠনটির সদস্য রাজীব ইসলাম বলেন, ‘প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য সবাইকে সচেতন করা। অনেকেই ভাবেন, আমার একটা ফেলা বোতলে আসলে কত আর ক্ষতি হয়, কিন্তু এ রকম একটি–দুটি বোতল দিয়ে অনেক আবর্জনা জমে যাচ্ছে। এর আকার যে কত বড়, এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আমরা সেটা দেখাতে চাই।’ তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বোতলের পুনর্ব্যবহার শুধু যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে তা–ই নয়, এগুলো সম্পদও। যেসব কোম্পানি প্লাস্টিকের বোতলজাত পানীয় ও খাদ্য উৎপাদন করে, তাদেরও এ বিষয়ে সচেতন করা প্রদর্শনীটির বিশেষ লক্ষ্য। সূত্র: প্রথশ আলো