যেভাবে চাইতে পারবেন পরিবেশ দূষণে প্রতিকার
ভোক্তা অধিকার আইনসহ অন্যান্য আইনে যেভাবে থানায়, আদালতে কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা যায়, পরিবেশ আইনে কোনও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সেভাবে মামলা করতে পারেন না বলে অভিযোগ আছে।
তবে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারাসহ পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে ঠিকই। তবে যে কেউ চাইলেই প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে বা থানায় যেতে পারবেন।
তারা বলছেন, আপনি এই আইনের অধীনে মামলা করতে পারবেন না, কোনও আইনে এমনটা বলার অর্থ ওই আইনের অধীনে নিম্ন আদালতে মামলা করা যাবে না। তবে উচ্চ আদালতে মামলা করা যাবে। আর পরিবেশ ধ্বংসকারীদের ‘ক্ষমতা’ বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়াই ভালো বলে মনে করেন তারা।
পরিবেশ আদালত আইন-২০১০-এ বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনও আইনে যা-ই থাকুক না কেন, পরিবেশ আইনে বর্ণিত সব অপরাধের বিচারের জন্য মহাপরিচালক বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারবেন বা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী থানায় এজাহার দায়ের করতে পারবেন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে অবশ্যই সাধারণ মানুষের মামলা করার সুযোগ রাখতে হবে। যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সহযোগী হিসেবে বেশ কিছু আইন আছে। যেমন, পরিবেশ আদালত আইন।’
তবে তিনি বলেন, আমি নিজেও চেষ্টা করেছি শব্দদূষণ নিয়ে মামলা করতে, অনেক চেষ্টার পরে তারা বলে যে, নিম্ন আদালত আমাদের জন্য নয়, আমাদের জন্য উচ্চ আদালত। এই অর্থে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনটি জনবান্ধব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আবু নাসের খান আরও বলেন, ‘আমরা চাই, আইনটি জনবান্ধব করা হোক। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সেরকম করা হলে অনেক মামলা হবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ অধিদফতর দীর্ঘদিন কোনও কাজ করেনি। তাদের মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলে খুব সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই। এজন্য বর্তমান আইনকে জনবান্ধব করাসহ দূষণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মামলা করার ক্ষমতা দিতে সরকারের উচিত এটিকে ঢেলে সাজানো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আপনি চাইলে হাইকোর্টে মামলা করতে পারেন। কোনও আইন যদি বলে, আপনি এই আইনের অধীনে মামলা করতে পারবেন না, এর মানে ওই আইনের অধীনে নিম্ন আদালতে মামলা করা যাবে না, কিন্তু উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, নিম্ন আদালতে মামলা করার জন্য কিছু ফাঁকফোকর দেওয়া হয়েছে। যেমন আপনি সরাসরি না করে পরিবেশ অধিদফতরের ডিজির কাছে অভিযোগ করবেন। তিনি রিপোর্ট দিলে যাবেন। রিপোর্ট না দিলেও আপনি যেতে পারবেন। কাজেই এখানে সরাসরি পারছেন না, একটা নিয়ম ফলো করে আপনি মামলা করতে পারবেন।
এই আইনজীবী বলেন, ‘নিম্ন আদালতে সরাসরি মামলা হলেও ভালো নয়, সরাসরি না হলেও ভালো নয়। কারণ, পরিবেশ যারা ধ্বংস করে তারা খুবই ক্ষমতাবান।’
থানায় মামলা করার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘থানায় সুযোগ আছে, আপনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা এফআইআর করতে পারবেন।’
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (আইন) খোন্দকার মো. ফজলুর হক বলেন, ‘বর্তমান আইনে আপনি চাইলে মামলা করতে পারবেন। আইনে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। এই আইনে বলা আছে যে, প্রতিকার চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করতে পারেন। মহাপরিচালকের অনুমোদন নিয়ে মামলা করতে পারবেন।’
তিনি আরো বলেন, যদি মহাপরিচালক অনুমোদন নাও দেন কিংবা পদক্ষেপ না নেন, তাহলে নির্দিষ্ট একটা সময় পর আপনি কোর্টে মামলা করতে পারবেন।