যেখানে নাম মাত্র দাবানল হত, সেখানেও ছড়াচ্ছে আগুন: জলবায়ু পরিবর্তন
বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম শহর হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় ইয়াকুটস্ক। এটা এমন এক এলাকা, যেখানে শীতকালে নাক ঢাকা না থাকলে ঠাণ্ডায় প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগতে হতো। স্থানীয় বাসিন্দারা বরফ শীতল আবহাওয়ায় মানিয়ে চলতে অভ্যস্ত, সকালে উঠে শীতের পোশাক পরতেই তাদের অনেকটা সময় চলে যায়।
অথচ সেই শহরটিই এখন কিনা ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা পড়েছে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ চলার ফলে কাছের বনাঞ্চল পুড়ছে দাবানলে। আগুন এতোটাই বড়, আর বাতাসের গতি এতটাই বেশি যে, এর ধোঁয়া সুদূর আলাস্কা পর্যন্ত চলে যাচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন রাজ্যের বুটলেগ দাবানল বিকট আকার নিয়েছে, তার ঘন ধোঁয়া মহাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মাইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
নিউ ইয়র্ক শহর গত বুধবার ঘুম ভেঙে দেখেছে গাঢ় লাল সূর্য। চারপাশে দাবানলের গন্ধ, ঘন বাদামী ধোঁয়াশা।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মত কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা জল-বোমা আর হোস পাইপ নিয়ে লেলিহান আগুন নেভানোর এক প্রায় অসম্ভব লড়াইয়ে অবতীর্ণ। আগুন যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য তারা মাটি কেটে, গাছ উপড়ে ফেলে আগুনের স্রোতে ছেদ টানার চেষ্টা করছেন।
সাইবেরিয়ার ইউকুটিয়া প্রদেশে মঙ্গলবার ধোঁয়া এতটাই ঘন ছিলো যে তল্লাশী ফ্লাইটের পাইলট সভিয়াতোস্লাভ কোলেসভ আকাশে উড়ে নিচের কিছুই দেখতে পাননি। সাইবেরিয়ার ওই অংশটি এমনিতেই দাবানলপ্রবণ, সেখানে একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বনভূমি। কিন্তু এ বছর দাবানলের চেহারা পুরোপুরি অন্যরকম বলে কোলেসভের মনে হচ্ছে।
ইয়াকুটিয়ার উত্তরে নতুন করে আগুন ধরেছে। ওখানে গত বছরও আগুন ধরেনি, এমনকি আগেও কখনো ওই এলাকায় দাবানাল হয়নি।
কোলেসভ এখন যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, সেই পূর্বাভাস বেশ কয়েক বছর ধরেই দিয়ে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। দাবানল এখন আগের চেয়ে আরও বড় আর তীব্র হচ্ছে। এমন সব এলাকায় দাবানল দেখা দিচ্ছে যেখানে আগে কখনো দাবানল হয়নি।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিবেশগত ভূতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক টমাস স্মিথ বলেন, “আগুনের মৌসুম এখন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, দাবানল বড় এলাকা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তীব্রতার মাত্রা থাকছে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।”
তার মতে, দুর্বল ভূমি ব্যবস্থাপনার মতো অনেক কারণে এসব দাবানল সৃষ্টির জন্য ভূমিকা রাখছে। তবে ঘন ঘন দাবানল সৃষ্টি এবং এর রাক্ষুসে চেহারা পাওয়ার পেছনে মূল অবদান রাখছে জলবায়ুর পরিবর্তন।
রাশিয়ার এরিয়াল ফরেস্ট প্রটেকশন সার্ভিসের তথ্য বলছে, এ বছরের শুরু থেকে ইয়াকুটিয়ায় ৬৫ লাখ একর বনভূমি পুড়িয়েছে দাবানল, যা প্রায় ৫০ লাখ ফুটবল মাঠের সমান এলাকা।
এসব দাবানল চরম জলবায়ু চক্রের অংশ। জলবায়ু পরিবর্তন শুধু আগুন ধরাচ্ছে না, এসব দাবানলের কারণে বায়ুমণ্ডলে আরও বেশি কার্বন গ্যাস ছড়াচ্ছে, যা সংকট বাড়িয়ে তুলছে। আর কয়েকজন বিজ্ঞানী বলেছেন, এ বছরের দাবানলগুলো এসেছে আরও বেশি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে।