নিউইয়র্ক-নিউজার্সীসহ বিভিন্ন এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত
১৬ তারিখ বুধ ও ১৭ তারিখ বৃহস্পতিবারের টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টার তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের জনজীবন।
নিউইয়র্ক, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া এবং পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের কয়েকটি অংশে ৫ কোটির বেশি মানুষ এ তুষারঝড়ের কবলে পড়েছে। তুষারঝড়ে রাস্তায় জমে যায় বরফের স্তূপ, বাধাগ্রস্থ হয় যান চলাচলে। তুষারঝড়ের উক্ত পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্যের কর্তৃপক্ষ।
বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তুষারপাত হয়। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, পূর্ব পেনসিলভেনিয়া থেকে নিউইয়র্কের ক্যাটসিল পর্বতমালার প্রশস্ত অঞ্চলে দুই ফুট পর্যন্ত তুষারপাত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ব্রিংহ্যামটন এয়ারপোর্টে ঊনচল্লিশ দশমিক এক ইঞ্চি তুষারপাত রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে একচল্লিশ ইঞ্চি তুষারপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানায়।
নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীতে বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটার দিকে বাইশ দশমিক সাত ইঞ্চি তুষারপাত হওয়ার রেকর্ড করা হয়। পাশাপাশি ৯ হাজার ৫০০ বাড়ী-ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। গত ৫ বছরে এমন তুষারপাত আর দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে ৮ ঘণ্টার লাগাতার ভারী তুষারপাতের কারণে নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কুমো রাজ্যের ১৮ টি কাউন্টিতে স্টেট অব ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছেন। রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে যানবাহন আটকে আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস বন্ধসহ বহু বিমানের সময়সূচি বাতিল করা হয়েছে। চলতি বছরে এটাই প্রথম বড় তুষারপাত বলে স্থানীয়রা উল্লেখ করেছেন।
তুষারপাতের কারণে নিউইয়র্ক রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬শ’টি সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। নিউইয়র্কের প্রতিবেশী রাজ্য নিউজার্সীতেও দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেখানে চলছে রাজ্য ইমার্জেন্সি।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা জানান, বাফেলো নগরীর অনেক এলাকা ইতোমধ্যে ২ ফুট বরফের নিচে ঢাকা পড়েছে । তুষারপাতের কারণে পশ্চিম নিউইয়র্কের বেশ কিছু শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি বরফে ঢাকা পড়েছে। এতে বহু লোক বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া সংস্থা সেখানে আরও প্রবল তুষারপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে।
তুষারপাতের সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বাফেলোর অধিকাংশ বাসিন্দাকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটি রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি অঙ্গরাজ্যে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে। এতে যান চলাচলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ওদিকে, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটির স্কুল বন্ধ থাকলেও শুক্রবার থেকে স্কুল চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন মেয়র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে খুলে দেয়া হয়েছে সিটির আউটডোর ডাইনিং। অন্যদিকে, মৌসুমের প্রথম তুষারপাত শেষে বিকেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাসা-বাড়ীর সামনে এমনকি বরফাচ্ছাদিত শ্বেতশুভ্র মাঠে খেলায় মেতে উঠতে দেখা গেছে অনেককে। শিশুদের আনন্দ বাড়াতে রিমোর্ট লার্নিং ক্লাস আগেভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি চলছে বরফ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব