শ্রীমঙ্গল শহরের ময়লা-আবর্জনায় ভরে উঠেছে পৌরসভার ভাগাড়টি।বৃটিশ আমলে এ ভাগাড়টি একটি পুকুর ছিল। ধীরে ধীরে তা শহরের ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়। ভাগাড়টি তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আর রাস্তার কিনারে হওয়ার কারণে এর পাশ দিয়ে চলার সময় দূর্গন্ধে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের পথ চলতে অনেক কষ্ট হয়।
তাছাড়া ভাগাড়টির আশেপাশে অনেক কৃষিজমি রয়েছে। সেসকল জমি ভাগাড়ের দূষণের কারণে একবারে নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে কোন ধরনের ফসলই আবাদ করা যাচ্ছে না। ভূমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও কৃষি জমিতে কৃষিজাত পণ্য চাষ করতে পারছেন না অনেকে।
সম্প্রতি শহরতলীর চা বাগান ভাড়াউড়াতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়। সেই ভাগাড়ের পরিমাণ হবে দুই বিঘা। কিন্তু কয়েক বিঘা কৃষি জমি মারাত্মকভাবে দূষণে জর্জরিত করে রেখেছে এ ভাগাড়।তারা প্রত্যেকেই এ ময়লা-আবর্জনাময় কৃষি জমির দ্রুত সংস্কারের দাবি করেন। যাতে তারা আসন্ন শীতের বিভিন্ন ফসলাদি চাষ করে নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ দরিদ্রতাকে দূর করতে পারেন।
ভাড়াউড়া শ্রমিক লাইনের একটি মুদি দোকানের মালিক এখন দুলাল কাহার। এক সময় কৃষি কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ওই ভাগাড়ের পাশে নিজের জমি রয়েছে তার। কিন্তু সেখানের মাটি দূষণের কারণে সেই জমিতে কোনো কিছুই চাষ করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, সেই বৃটিশ আমলে এটা একটি পুকুর ছিল। পৌরসভার যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে আজ টিলা হয়ে গেছে। আমরা এর আপপাশে যারা জমির মালিক আছি তারা সেখানে কয়েক বছর যাবৎ কৃষি কাজ করতে পারছি না। এখানে আমাদের ১৯-২০ জনের কৃষি জমি আছে। জায়গার পরিমাণ কম করে হলেও প্রায় ৩৫ কিয়ার (বিঘা) এর মতো হবে।
দুলাল কাহার বলেন, এখানের মাটিতে নেমে চাষাবাদ করলে আমাদের বিভিন্ন চর্মরোগ হয়। ক্ষতিকর পোকামাকড় জন্মে এখানে। এছাড়া বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে আমরা এ জমিতে কোনো প্রকার কৃষিপণ্য উৎপন্ন করতে পারি না। কোনো প্রকার ফসল না হওয়ার কারণে এখানের কৃষকদের ভূমি থেকেও ভূমিহীন।
এখানে পরিশ্রমের মাধ্যমে যে টাকা খরচ করে বিভিন্ন কৃষিপণ্য লাগানো হয়, শুধুমাত্র মাটি দূষণের কারণে ফসল না হওয়া আমরা দারুণভাবে ক্ষতির মুখে। সরকার যদি এ জমিটি সংস্কার করে আমাদের কৃষি কাজের উপযোগী হিসেবে তৈরি করে দেয় তাহলে আমরা গরিব কৃষকরা খুবই উপকৃত হবো বলে জানান এলাকার একাধিক কৃষক।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাগর হাজরা বলেন, আসলে এখানকার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার এ ভাগাড়টি অন্যত্র সরানোর ব্যাপারে অনেক আন্দোলনও হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন সচিব, সংসদ সদস্যসহ উচ্চ পর্যায়ের অনেক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাটি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতিই হয়নি। আমি নিজেও বিষয়টি নিয়ে হতভম্ব হয়ে গেছি।
তিনি বলেন, এ ভাগাড়টি এখান থেকে স্থানান্তরের জন্য জায়গাও দেখা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে স্থানান্তর করা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা ময়লা-দুর্গন্ধ নিয়ে যাতায়াত করছেন। এখানে পৌরসভার জায়গা সীমিত। কিন্তু প্রতিদিন ময়লা ফেলতে ফেলতে সেই জায়গার পরিমাণ তিন থেকে চার ডাবল হয়ে গেছে।
এখানকার মাটি পরীক্ষা করে জমিটি কৃষির জন্য সংস্কারের উদ্যোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান উপজেলা পরিষদের এ জনপ্রতিনিধি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আলোচনার প্রসঙ্গ শুনে ধন্যবাদ জানিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা বলেন, আমি স্থানীয় কৃষকদের কথা চিন্তা করে যতো শিগগির সেখানকার মাটি পরীক্ষার জন্য পাঠাবো। তখন জানা যাবে সেখানকার মাটির অবস্থা কেমন। সে হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভাগাড়ের আশপাশের কৃষি জমির সংস্কার করা হবে। সূত্র: বাংলানিউজে।