মৎস্যজীবীদের অসচেতনতায় দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের পরিবেশ
আর্টিশনাল মৎস্যজীবীদের অসচেতনতায় সমুদ্রের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। বুধবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘উপকূলীয় ও সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধে আর্টিশনাল মৎস্যজীবীদের করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
সংলাপে বক্তারা বলেন, আর্টিশনাল ফিশারম্যানদের (প্রথাগত জেলে) অসচেতনতায় সমুদ্রের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাঁরা না জেনে সমুদ্রে অহরহ প্লাস্টিক ফেলছেন। এতে সমুদ্রের উপরিভাগ, তলদেশ ও উপকূল হুমকিতে পড়ছে।
প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো সূর্যরশ্মি, অতি বেগুনি রশ্মি ও জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মাইক্রো প্লাস্টিকে রূপান্তরিত হচ্ছে। এসব মাইক্রো প্লাস্টিক সামুদ্রিক ও উপকূলীয় পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। পরবর্তী সময়ে মাছ, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ, কাঁকড়া, ডলফিনসহ সামুদ্রিক প্রাণিকুলের খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্প্রসারিত হয়, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প’ এই সংলাপের আয়োজন করে। প্রকল্পের উপপরিচালক মো. কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পটুয়াখালীর মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম, ভোলার মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ, ঝালকাঠির মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ, পিরোজপুরের মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুল বারী, বরগুনার মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব ও বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উপপরিচালক মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার মাছ ও প্রাণীদের চলাচল, শ্বাস-প্রশ্বাস ও খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে প্লাস্টিক।
ভাসমান প্লাস্টিকসামগ্রী সমুদ্রে সূর্যালোক প্রতিহত করে। ফলে সমুদ্রে অক্সিজেন প্রবাহ ব্যাহত হয় ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এ কারণে সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য প্রাণিকুলের বিচরণ, প্রজনন ও খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে, যা সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।
বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জলজ সম্পদ রক্ষায় সুফলভোগী জেলেদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, সমুদ্র তাঁদের সম্পদ। জেলেরা একটু সচেতন হলেই সমুদ্রের পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা যাবে।
ভোলার মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, প্লাস্টিক সামগ্রী নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অভ্যাস করতে হবে। যেসব জেলে সমুদ্রে মাছ ধরেন, তাঁরা সমুদ্রে প্লাস্টিক না ফেলে উপকূলে নিয়ে আসতে পারেন। এতে সমুদ্রের পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকবে।
উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে কাজ করা গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, প্লাস্টিক-পলিথিন বা অপচনশীল দ্রব্য ব্যবস্থাপনার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সামুদ্রিক শৈবাল চাষে গুরুত্ব দিতে হবে। জেলেদের মধ্যে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে সম্যক ধারণা দিতে হবে।
মহিপুর মৎস্য আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহিপুর-আলীপুর বন্দরের জেলেদের সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধে সচেতন করা হবে। বিশেষ করে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হবে।
নাগরিক সংলাপে অন্যদের মধ্যে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন, কুয়াকাটা আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন শেখ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সংলাপে বরিশালের বিভিন্ন জেলার মৎস্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সংবাদকর্মী, কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুর বন্দরের জেলে, আড়তদারেরা অংশ নেন।