মৃতপ্রায় খুলনার তালতলা খাল
খুলনা সিটি করপোরেশনের তালতলা খাল ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। পুরো খাল এখন ঘাস, কচুশাক ও জলজ উদ্ভিদে পূর্ণ। বর্জ্যের কারণে পানির প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধ দখলদার। খালপাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা-আধাপাকা ঘরবাড়ি, গরুর খামার। মৃতপ্রায় খালটি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। মশার প্রজননক্ষেত্রও এখন এই খাল।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দখল-দূষণে খালটি অস্তিত্বসংকটে পড়েছে। দখলমুক্ত করে বড় ধরনের খননকাজ না চালালে অচিরেই খালটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
নগরের ছোট বয়রা করিম নগর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর গেটের রাস্তার ঠিক বিপরীত পাশ থেকে খালটির শুরু। এক কিলোমিটারের কিছু বেশি দৈর্ঘ্যের খালটি গিয়ে মিশেছে নগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ময়ূর নদে। মুজগুন্নী মহাসড়ক থেকে খাল শুরুর প্রায় ২০০ মিটার পরে গিয়ে খালের ওপর দিয়ে ডাক্তারপাড়ার পাকা সড়ক চলে গেছে। সড়কের নিচে ছোট একটি কালভার্ট।
ওই সড়কের পর থেকে খাল সরু হতে শুরু করেছে। দুই পাশ থেকে দখল করা হয়েছে। খালের ওপরেই বেশ কয়েকটা গরুর খামার। আশপাশের অন্তত ২৫টি স্থাপনা গড়ে উঠেছে খালের ওপর। খালের মধ্যে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সেই বর্জ্য আবার আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। আরেকটু সামনে যেতেই আরেকটা কালভার্ট। এর ঠিক নিচে খালের মাঝবরাবর ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে যেখানে দাঁড়ানোই দায়। ওই কালভার্টের পর থেকে ময়ূর নদ পর্যন্ত অংশে জলজ আগাছা। সেখানে পানি দেখা যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১০-১১ বছর আগে খালটির সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের দিকে খালটি খনন করা হয়। তবে যেনতেন সেই খননে কোনো উপকার মেলেনি। বরং ক্ষতিই হয়েছে খালের। খাল খননের পর মাটি খালের পাশেই রাখা হয়েছিল। আস্তে আস্তে সেই মাটির ওপর দিয়ে চলাচলের পথ তৈরি হয়ে যায়। পরে সিটি করপোরেশন সেখানে প্রায় ১৫ ফুট চওড়া রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছে। স্থানীয় মানুষ সড়কটিকে হাজি আবদুর রহমান সড়ক নামেই চেনে। ওই সড়ক তৈরির কারণে খালের প্রস্থ অনেকটা কমে গেছে।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, খালটা খনন করার জন্য একটা প্রাক্কলনের প্রক্রিয়া চলছে। ২০০৯ সালের দিকে একবার ডিমার্কেশন করা হয়েছিল। এরপর আবার কিছুটা দখল হয়েছে। নতুন করে ডিমার্কেশনের কাজ চলমান রয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মাইকিং করা হবে। ডিমার্কেশন হয়ে গেলে পুর শাখা থেকে দ্রুত প্রাক্কলন করা হবে।
স্থানীয় হাসানবাগ এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, খালটি এখন করিমনগর আবাসিকের সামনের মুজগুন্নী মহাসড়ক থেকে শুরু মনে হলেও এটা আরও লম্বা ছিল। খালের ওপর দিয়েই মুজগুন্নী মহাসড়ক তৈরি হয়েছে। তখন থেকে খালের দৈর্ঘ্য কমেছে। এই খালে আগে বড় বড় নৌকা চলত। আশপাশের মানুষ খালে মাছ ধরত। নানা কারণে খাল এখন ছোট হয়ে গেছে। পাঁচ-ছয় বছর আগে খালের পাশে যে রাস্তা হয়েছে, সেটাও খালের মধ্যে ছিল।
আরেক বাসিন্দা আবুল হাসেম বলেন, খাল দিয়ে পানি তো তেমন সরতে পারে না। মশারও আবাসস্থল এই খাল। তারপরও খাল যতটুকু আছে, সেটুকু ঠিকঠাক খনন করা হলে বয়রা, ছোট বয়রা, করিমনগর এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকত না।
খুলনা সিটি করপোরেশনের এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় দুই পাশে পার্শ্ব দেয়াল (গাইড ওয়াল) করে খালটা খনন করা হবে। খালের দুই পাশে ওয়াকওয়ে থাকবে। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রাক্কলন করা হবে।
খালের ওপর দিয়ে সিটি করপোরেশনের রাস্তা তৈরির বিষয়ে নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, খুলনায় খালের পাড়ে এক ইঞ্চিও জায়গা না রেখে মানুষ বাড়ি করে। ওই খালের ক্ষেত্রেও ও রকমটাই ঘটেছে। খালের পাড়ে মানুষের চলাচলের পথ হয়ে যাওয়ায় সেইভাবে রাস্তাটা করে দেওয়া হয়েছে। আর এটা সত্যি, রাস্তাটা খালের অংশেও কিছুটা পড়েছে।