মানব সভ্যতার স্বাস্থ্য প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে
মানুষ এবং গ্রহ উভয়ই যখন সুস্থ থাকে তখন মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। তাই একজন মানুষের মঙ্গল এবং গ্রহের মঙ্গল একে অন্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। গ্রহের স্বাস্থ্য বলতে ‘মানব সভ্যতার স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক অবস্থা যার ওপর এটি নির্ভর করে।’
এটি ধারণা দেয় যে মানুষের সুস্থতা, পৃথিবীর সুস্থতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং তাই গ্রহের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং এর উন্নতির জন্য একই সঙ্গে মানুষের রোগ এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির অন্তর্নিহিত কারণগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, আজ আমাদের যে অর্থনীতি তা আমাদের সুস্থতাকে ধ্বংস করছে।
যদিও এই অর্থনীতি মানুষের চতুরতা প্রকাশ করেছে, আর্থিক সম্পদ তৈরি করেছে এবং কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলেছে। কিন্তু এটি বাস্ত্ততন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং সামাজিক বৈষম্যকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি টেকসই ও সমৃদ্ধিশীল অর্থনীতির পথ খুঁজে পেতে আমাদের পরিবেশ রক্ষা, দারিদ্র্যসীমার ক্ষেত্রে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন, ক্ষুধার মুক্তি, শিক্ষাসহ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
দারিদ্র্য দূর করতে হলে আমাদের প্রথমত দেশের বেকারত্ব দূর করতে হবে, যেমন বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ২০১৯ সালে ৪.২০% থেকে ২০২২ সালে ৫.৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণকে স্ব-উদ্যোগী হতে হবে এবং আত্মকর্মসংস্থানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
তাদের প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া উচিত এবং স্ব-উদ্যোগী ব্যক্তিদের জন্য ব্যাংকের সব সুবিধাসহ ছোট-বড় ঋণ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাসের বার্ষিক হার ইতিমধ্যে ১.৭% থেকে ২.৪%-এ বেড়েছে।
এই বছর বাংলাদেশের ক্ষুধার মাত্রা প্রথম বারের মতো ‘মধ্যম’ মানে নেমে এসেছে যা দেখা যায় জি এইচ আই স্কোরে যেখানে বাংলাদেশ ১০০ র মধ্যে ১৯.১ পয়েন্টের জি এইচ আই (গ্লোভাল হাংগার ইনডেক্স) স্কোর অর্জন করেছে।
সুতরাং, এটি এখন উদ্বেগের বিষয় এবং ক্ষুধা থেকে মুক্তির জন্য, আমাদের সবচেয়ে বড় ও ক্ষুদ্রতম উত্পাদন খাতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাস, প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম বৃদ্ধি, ঋণ সুবিধার মতো মূল সমস্যাগুলো খুঁজে বের করা উচিত এবং শ্রমিকদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত যাতে করে তারা অধিক উত্পাদনে উত্সাহিত হয়।
আজকের বিশ্বে পরিবেশ দূষণ মানবজাতির প্রধান শত্রু হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও বর্তমান পরিবেশগত অবস্থা রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য নষ্ট করছে। মারাত্মক বায়ু, পানি, আবর্জনা দূষণ এবং খাদ্য বর্জ্য মানব স্বাস্থ্য, বাস্ত্ততন্ত্র এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকিস্বরূপ।
এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) র্যাঙ্কিং রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণ নিরাময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় নিকৃষ্ট। এই সমস্যা প্রশমিত করার জন্য বিস্ময়কর সমাধান হলো সৌর প্যানেল, বায়ু শক্তি, কম্পোস্টিং, ইলেকট্রনিক যানবাহন, প্রোগ্রামেবল থার্মোস্ট্যাট, সবুজ পরিবহন, ধূসর জল, আলো, তথ্য প্রযুক্তির মতো প্রযুক্তিগুলোতে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ এবং প্রতিটি শিল্প বা কোম্পানি দূষণকারী এবং নোংরা জ্বালানি কমানোর জন্য এসব প্রযুক্তির (ক্লিন টেকনোলজি) ব্যবহার প্রতিযোগিতামূলক হওয়া উচিত।
অতএব, যদি আমরা এমন একটি পরিবেশ অর্জন করি যা স্বাস্থ্যকর, তবে আমরা সুস্থ থেকে মসৃণভাবে জীবনযাপন করতে পারব এবং এটি আমাদেরকে সতেজতা দিবে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের উজ্জ্বল লক্ষ্যগুলোতে মনোনিবেশ করতে পারব এবং এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করে আমরা জীবনের মান উন্নত করতে পারব এবং তাই মানুষকে (ক্লিন টেকনোলজি) প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বোঝানো এবং এতে বিনিয়োগ করতে উত্সাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।