ভারতকে কয়লা দিতে গিয়ে পরিবেশের কি মারাত্মক ক্ষতি করছে রাশিয়া? বাণিজ্যিক স্বার্থে কি ভারতও এড়িয়ে যাচ্ছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি?
ধাতব শিল্পের জন্য কয়লার উপরে ভারতের নির্ভরশীলতা ক্রমশ বাড়ছে। দেশের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘পৃথিবীতে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে আমরা দ্বিতীয়। ২০৩০-এর মধ্যে বার্ষিক তিন মিলিয়ন এই কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের সবথেকে বড় ভরসা রাশিয়া। রাশিয়াও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে কয়লা রপ্তানি ছ’গুণ বাড়িয়ে বার্ষিক ২৮ মিলিয়ন টনে নিতে চাইছে। আন্তর্জাতিক বাজারের নিরিখে এই পরিমাণ কয়লা ‘বিপুল’ বলা চলে না, বরং ‘বাস্তবসম্মত’ই।
কিন্তু তাতেও দূষণের অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না। সুমেরু অঞ্চলে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্ভার নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সুমেরু সাগরে বরফের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সেখানকার খনিজ সম্পদ তোলা সহজতর হয়েছে। ফলে এই তাইমির অঞ্চলে রুশ পণ্যবাহী জাহাজের আনাগোনা বেড়েছে এই এলাকায়। এখানে ভালো মানের কোক কয়লার বিপুল সম্ভার রয়েছে। আবার সেই সঙ্গে বণ্যপ্রাণের স্বর্গরাজ্যও বটে তাইমির। রাশিয়ার সবথেকে বড় প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য তাইমির।
নিজেকে পরিবেশ আন্দোলনকারী পরিচয় দেওয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন অবশ্য তাইমিরের খনিজ উত্তোলনে কোনও কসুর বাদ রাখতে নারাজ। ভারত, চিন-সহ এশিয়ার বাজারে কাঁচামালের সরবরাহের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে চায় রাশিয়া। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে যে সংখ্যক জাহাজ তাইমির উপদ্বীপ অঞ্চলে যাচ্ছে, তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেখান থেকে ভারতে আসতে জাহাজগুলি যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ করছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেছেন পরিবেশবিদরা। অথচ, সুমেরুর এই অঞ্চলেই রাশিয়ার গ্যাস-ভাণ্ডারের ৭২ শতাংশ রয়েছে।
বল্গাহরিণ, পরিযায়ী পাখি থেকে শুরু করে মেরু ভাল্লুক- এই অঞ্চলে খনিজের সন্ধানে মানুষ ও জাহাজের আনাগোনায় বিপন্ন প্রাণিকুল। দূষণের সঙ্গে চোরাশিকারিদের আনাগোনা বেড়েছে এই এলাকায়। ডব্লিউডব্লিউএফ রাশিয়ার পরিবেশবিদ অ্যালেক্সি নিঝনিকভের কথায়, ‘এই ধরনের সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রে নতুন প্রকল্প গড়ে তোলা পাগলামি।’ ইতিমধ্যেই তাইমির উপদ্বীপ লাগোয়া নরিলস্ক শহরে ভারী ধাতু এবং সালফার ডাইঅক্সাইডের কারণে দূষণের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।
যে এলাকায় কয়লার পরিমাণ সবথেকে বেশি, সেই মেদুসা বে-তে প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিরা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। তার মধ্যে ছ’টি বিপন্ন প্রজাতির পাখিও রয়েছে। সেখানে খনি-সংক্রান্ত আইন ভাঙায় ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনি ঝামেলায় জড়িয়েছে একটি খোলামুখ খনি সংস্থা। গ্রিনপিসের বক্তব্য, যে ভাবে কয়লা খনিতে কাজ চলছে, তাতে কয়লার গুঁড়োয় প্রাকৃতিক সম্পদ খুব দ্রুত শেষের দিকে এগিয়ে যাবে।