28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ৮:৫৯ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
সৌন্দর্য নষ্ট ও পরিবেশদূষণ করা হচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কের
পরিবেশ দূষণ

সৌন্দর্য নষ্ট ও পরিবেশদূষণ করা হচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কের

সৌন্দর্য নষ্ট ও পরিবেশদূষণ করা হচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কের

ভারতীয় উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনামলের স্মৃতিবিজড়িত বাহাদুর শাহ পার্ক ঢাকার ঐতিহ্য ও গৌরব বহন করে আসছে। কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই পার্কের ভেতরে চলছে ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের কাজ।

একটি ফুড ব্র্যান্ডকে ক্যাফেটেরিয়া তৈরির জন্য ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এতে ক্ষোভ জানিয়েছে পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

মানুষের এক টুকরো শান্তির নীড় এই পার্কে ফুড কোর্ট স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে গত দুই দিন ধরে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে পার্কে নিয়মিত হাঁটতে আসা সাধারণ মানুষ ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংরক্ষণ পরিষদ।

আর ঐতিহ্যবাহী এই পার্কের ভেতর ক্যাফেটেরিয়া তৈরি হলে পার্কের সৌন্দর্য নষ্ট, পরিবেশদূষণ ও সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।



স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘আজ ক্যাফেটেরিয়া হচ্ছে। কাল এখানে আরও দোকান বসবে। পার্ক নোংরা হবে। আমরা ক্যাফেটেরিয়া তৈরির কাজ বন্ধ করে দ্রুত এসব সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার জোর দাবি জানাই। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই পার্ককে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে আমরা আদালতে যাবো।’

লক্ষ্মীবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা সুলতানা বেগম বলেন, ‘রক্ষণাবেক্ষণের নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই পার্কের সৌন্দর্য নষ্ট করছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আজ ক্যাফেটেরিয়া হলে কাল এর ভেতর আগুন জ্বলবে, ধোঁয়া উঠবে।

চারপাশের গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যাবে। পুরো পার্ক নোংরা হবে, পরিবেশ দূষিত হবে। এমনিতেও পার্কে বখাটেদের উৎপাত অনেক বেশি। তার ওপর পার্কের ভেতরে ক্যাফেটেরিয়া হলে এখানে ওদের আড্ডাখানা হয়ে যাবে, ওরা আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে।’

কলতাবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, ‘পুরান ঢাকায় তেমন কোনও উন্মুক্ত স্থান না থাকায় ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ এই পার্কে সকাল-বিকাল হাঁটাহাঁটি করেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ পঞ্চাশোর্ধ্ব। আমার নিজেরও ডায়াবেটিস। ২০ বছর ধরে যখনই সময় পাই এই পার্কে হাঁটাহাঁটি করি। এই পার্ক ছাড়া আশপাশে আর কোনও ফাঁকা জায়গা নেই। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা এই পার্কে এসে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেন, গানবাজনা করেন, আবার কেউ বা গ্রুপ স্টাডিও করেন। এখানে ক্যাফেটেরিয়া তৈরি করা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’

বাহাদুর শাহ পার্কে ক্যাফেটেরিয়া তৈরির ইজারাদাররা বলছেন, ‘আমরা অন্যায় বা জোর করে এখানে কিছু করছি না। এটা সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। গত পরশু কাজ শুরু করেছি।



কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় করতে পারিনি। এখন সিটি করপোরেশনের নোটিশ লাগিয়ে কাজ করছি। এখানে ক্যাফেটেরিয়া তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলে লাইটিং করা হবে। পার্কটি আরও জাঁকজমকপূর্ণ হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। এখানে পরিবেশের কোনও ক্ষতি না করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।’

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব পার্ক সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ইজারার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাহাদুর শাহ পার্কে ক্যাফেটেরিয়ার জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। পার্কের মাঝখানে একটি ফুড ব্র্যান্ড থাকবে, যারা খাবার বিক্রি এবং পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে। এতে পার্কটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাবে।’

জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫ দশমিক ৩ কাঠা আয়তনের এই পার্কটি আধুনিকায়ন করে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ঐতিহ্যবাহী এই পার্কে সাধারণ মানুষের জন্য হাঁটার পথ, গণশৌচাগার, বসার জন্য বেঞ্চ ও পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়। পার্কটি সবসময় সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। রাতের বেলায় ঝলমলে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বৃষ্টির পানি অপসারণে পার্কের চারপাশে ৪ ফুট গভীর ড্রেন করা হয়েছে। মেঝেতে বিছানো হয় নুড়িপাথর। রাস্তা দখল করে আগের তুলনায় পার্কটি কিছুটা সম্প্রসারণ করা হয়।



প্রসঙ্গত, রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্ক ইতিহাসের এক সাক্ষ্য বহন করছে। ইংরেজ মেরিন সেনারা ১৮৫৭ সালে ঢাকার লালবাগ কেল্লায় আক্রমণ চালায়। স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এ দেশের সেনারা তাতে বাধা দেয়।

শুরু হয় যুদ্ধ। আহত ও পলাতক সেনাদের গ্রেফতার করে এক প্রহসনমূলক বিচারের আয়োজন করে ইংরেজ সামরিক আদালত। তখন ১১ বিপ্লবীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

আর সেই রায় কার্যকরের জন্য ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয় এই পার্কে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিণাম হিসেবে জনগণকে ভয় দেখাতে বিপ্লবীদের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয় পার্কের গাছের ডালে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত