ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার ১০টি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে যীশু মিয়া নামে একজন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার (৬ জুন ২০২০) সকাল ৮:৩০ মিনিটের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় চলাকালে বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের যীশু মিয়া (৫৫) ভয়ে স্ট্রোক করে মারা যান। নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফি জানান, ঝড় চলাকালে তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাণ হারান।
ঝড়ে লণ্ডভণ্ড গ্রামের বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফিসহ সরকারী কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দেন।
নাসিরনগর পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা বিধবা অনিতা দাস জানান, কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার বসতঘর ও রান্নাঘরটি উড়িয়ে নিয়ে যায় ঘূূর্ণিঝড়। ঘরের আসবাবপত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিছুই অবশিষ্ট নেই। তিনি এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।
একই গ্রামের জালাল মিয়া, রতিলাল দাস, মূল চান বেগম চানের ঘরটিও ঝড়ে উড়ে যায়। ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হন রতিলাল এবং মূলচাঁন বেগম।
আহত রতিলাল জানান, ঝড়ের সময় তিনি খাটের নিচে অবস্থান নেন। এসময় টিনের চালা পড়ে কিছুটা আহত হন। তার ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আহত অপর বৃদ্ধা মূলচাঁন বেগম বলেন, ‘হঠাৎ করে একটা পাক আইয়া আমার ঘরটারে কই যানি নিয়া গেছে। আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কই থাকমু বুঝে উঠতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনোক্রমে ঘরের ড্রামের চিপায় বসে ছিলাম। আমার গায়ের ওপর ঘরের বাঁশ পড়ে পিঠ কেটে গেছে।’
ঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত নাসিরনগর সদরের পশ্চিমপাড়া, গাঙ্কুল পাড়া এবং পাশ্ববর্তী বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর আশুরাইল, বেনিপাড়া সহ ১০টি গ্রাম পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফি।
পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দুটি ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের শতাধিক বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে। এসময় নাসিরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেন, পিআইও অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী শম্ভুনাথ আচার্যসহ সরকারী কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।
নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল ম্যানেজার হিমেল কুমার সাহা জানান, ৩৫ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। দুটি স্থানে বৈদ্যুিতক ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। ঝড়ের পরপরই আমরা বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতের চেষ্টা করছি। তবে বিদ্যুৎ কখন আসবে এখনই সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে নাসিরনগরের ১০টি গ্রামের শতাধিক এবং সরাইল উপজেলার দুটি গ্রামের ৩০টির বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমাদের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরির্দশন করেছে। প্রতিটি পরিবারকে নগদ টাকা, ঢেউটিন, খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে। সূত্র; বাংলা ট্রিবিউন