রাশিয়ার উত্তর সাইবেরিয়ায় হঠাৎ ই সৃষ্টি হয়েছে বিশালাকার বহু গর্ত। বরফে ঢাকা সাইবেরিয়ায় গর্তগুলো কিভাবে সৃষ্টি হলো তার রহস্য এখনও উন্মোচিত করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। ২০১৪ সালে প্রথম হেলিকপ্টার থেকে দেখা যায় গর্তগুলো।
রহস্যজনক এই গর্তগুলো নিয়ে গবেষণা করার জন্য তারপর থেকেই গবেষকরা বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে । কিন্তু নিশ্চিত সমাধান এখনও কেউ দিতে পারেননি। কোনও বিজ্ঞানী মনে করেন, বিশালাকার উল্কা এই অংশে খসে পড়ে এমন গর্ত তৈরি হয়েছে।
আবার কোনও বিজ্ঞানীর মনে করেন, ভিনগ্রহীদের যান নেমেছিল এই অংশে। তখন থেকেই এমন গর্ত তৈরি হয়েছে। এমন নানা মতবাদদের মধ্যে বিজ্ঞানীমহলে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হল প্রাকৃতিক গ্যাসের নির্গমন।
একদল বিজ্ঞানীদের মতে , প্রচন্ড চাপে এই অংশে মাটির নীচে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস জমে ছিল। সাইবেরিয়ার ক্রমশ বাড়তে থাকা তাপমাত্রার জেরে ওই গ্যাসের আয়তন বৃদ্ধি পায়। ফলে চাপ বাড়তে বাড়তে একসময় জোরে বিস্ফোরণ হয়েই এই গর্তগুলো সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যেকটি গর্ত ১০০ ফুট পর্যন্ত চওড়া এবং ৬০ ফুট পর্যন্ত গভীর এই অঞ্চলে। বিজ্ঞানীরা ওই সমস্ত গর্তের ভিতরে মিথেন গ্যাস উপস্থিতির প্রমাণও পেয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি এ তত্ত্ব সঠিক হয় তবে সারা বিশ্বের এটা খুবই চিন্তার বিষয়। এমনকি পৃথিবী ধ্বংসের ইঙ্গিতও হতে পারে এটা।
কেননা যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলেই এমন হয়ে থাকে তবে তার কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন। এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে দ্রুত সাইবেরিয়ার উপরে জমে থাকা সমস্ত বরফ গলতে শুরু করেছে।
ওই গর্তগুলো দ্রুত ভরে যাচ্ছে জলে।আর আগামী ১-২ বছরের মধ্যে তা পরিপূর্ণ জলে ভরে যাবে। তখন আর এই গর্তগুলোর রহস্য ভেদ করার জন্য গবেষণাও চালানো সম্ভব হবে না বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।
জানা যায়, পৃথিবীর বুকে জমে থাকা বরফ পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ এগুলো কার্বন গ্যাস শোষণ করে নেয়।
কিন্তু সাইবেরিয়ার ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তে থাকা তাপমাত্রার জেরে মাটির নীচে জমে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাস আরও বেশি পরিমাণে পরিবেশে মুক্ত হয়ে পড়ছে।
এই দুটোই গ্রিনহাউস গ্যাস। গ্রিনহাউস গ্যাস পরিবেশের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলছে, যার ক্ষতিকর প্রভাব সাইবেরিয়ার ওই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে।