বিশ্বব্যাপী পানি সংকট সমাধানে যুগান্তকারী পদক্ষেপের আহ্বান জাতিসংঘের
বৈশ্বিক পানি সংকট মোকাবিলায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ‘২০২৩ পানি সম্মেলনে’র উদ্বোধনী ভাষণে এ আহ্বান জানান সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
বিশ্বব্যাপী পানি সংকট সমাধানে সাহসী প্রতিশ্রুতি এবং আন্তঃসীমান্ত পানি সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের ৪০টি দেশ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর প্রতিনিধি এবং গবেষক ও শিক্ষাবিদরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচকেরা পানির গুরুত্ব এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর প্রভাব নিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় জাতিসংঘের সদর দফতরে পানি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্থাটির মহাসচিব।
এসময় তিনি বলেন, ‘ওয়াটার কনফারেন্স’ একটি সম্মেলনের চেয়েও বেশি কিছু।
বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন, শান্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য পানির গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই সম্মেলন ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গুতেরেস।
আয়োজকেরা জানান, নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং পরিচ্ছন্নতা—মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের অংশ।
কিন্তু এখনও বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে রয়েছে। টয়লেট ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ব্যবহারকারীর চেয়ে বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি এবং ৮০ শতাংশ বর্জ্য পরিবেশে নিঃসৃত হচ্ছে।
আয়োজকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নিরাপদ পানির পৃথিবী গড়ে তোলা এখনও সম্ভব। তবে এখনই নিতে হবে জরুরি পদক্ষেপ।
তিনদিন ব্যাপী পানি সম্মেলনে বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ৬ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। পানি সমস্যার সমাধানে উদ্ভাবনী ও সাহসী প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা ও বাস্তব পদক্ষেপের সূচনা হবে বলে আয়োজকরা মনে করছেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলিয়াম আলেক্সান্দার বলেন, ‘পানি নিয়ে বৈশ্বিক এজেন্ডা ও নীতি-কর্মসূচিকে যথাযোগ্য গুরুত্ব না দেওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না। আমরা আমাদের সকল অঙ্গীকার ও কাজকে একটি ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডায় পরিণত করতে চাই।’
‘২০২৩ ওয়াটার কনফারেন্স’-এর মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— এসডিজি-৬ এর অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী ‘ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা’ তৈরি করা, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশ ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরবে। ইতোমধ্যে বহু প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছেন, যার সারাংশ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ঘোষণা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এবং সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেল লি জুনহুয়া বলেন,‘আমরা কীভাবে পানির গুরুত্ব দেবো, তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং শান্তির ক্ষেত্রে পানির ভূমিকা এবং প্রভাব উভয়ই বিবেচনা করতে হবে।’
২০২২ সালের জুলাইয়ে ওয়াটার কনফারেন্সের সহ-আয়োজক নেদারল্যান্ডস এবং তাজিকিস্তানের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পানি সম্মেলনের পাঁচটি থিম নির্ধারণ করা হয়। পরে ওই বছরের অক্টোবরে প্রস্তুতিমূলক সভায় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি দেয়।
থিম পাঁচটি হচ্ছে—ওয়াটার ফর হেলথ, ওয়াটার ফর ডেভেলপমেন্ট, ওয়াটার ফর ক্লাইমেট, রেজিলেন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, ওয়াটার ফর কো-অপারেশন এবং ওয়াটার অ্যাকশন ডেকেড। সম্মেলনে উদ্বোধনী ও সমাপনী সেশনের পাশাপাশি ছয়টি পূর্ণাঙ্গ সেমিনার, পাঁচটি অংশগ্রহণমূলক সভা থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে এই সম্মেলনে। পাশাপাশি একাধিক পার্শ্ব-আয়োজনে অংশ নেবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।