বায়ুদূষণের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশের অর্থনীতি
কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় প্রথম দিকে বাংলাদেশের নাম ও নগরের তালিকায় ঢাকার নাম থাকছে। এটা খুব দুঃখজনক। বায়ুর মান খারাপের ফলে জনস্বাস্থ্য যে চরম ক্ষতির মুখে, তা বলা বাহুল্য। এমনই আরেক নেতিবাচক দিক হলো, দেশের ভাবমূর্তি।
সারা বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে অন্য দেশের মানুষ আমাদের দেশে আসতে নিরুৎসাহিত হবে। দেশে বিনিয়োগ কম হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই বায়ুদূষণকে নিছক পরিবেশগত ইস্যু হিসেবে দেখলে হবে না। এর সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সরাসরি সম্পর্ক আছে।
ঢাকার বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে একসময় ইটভাটাগুলোকে সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে করা হতো। এখন পরিস্থিতির বদল হয়েছে। ঢাকার দূষণের প্রধান কারণ নির্মাণকাজের সময় সৃষ্ট দূষণ। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর নির্মাণের সময় সৃষ্ট ধুলাবালু বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়েছে। এ ছাড়া আছে যানবাহনের দূষণ। যানজট এ দূষণ আরও বাড়িয়ে তোলে।
রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার হাল করুন। সেটা দূষণের একটি বড় কারণ। বেশির ভাগ বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে। নির্মাণকাজের সময় সৃষ্ট ধুলার মধ্যে বড় কণাগুলোর চেয়ে ক্ষুদ্র কণা অনেক বেশি ক্ষতিকর। এর সঙ্গে যানবাহনের দূষিত পদার্থগুলো মিলে রাসায়নিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিকর দ্রব্য তৈরি হচ্ছে। এটি শুধু শিশুস্বাস্থ্য নয়, যেকোনো বয়সী মানুষের জন্য ভয়াবহ শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। আমাদের যেসব অসুখ এখন হচ্ছে, এর মধ্যে শ্বাসনালির অসুখ বেশি। বায়ুদূষণের কারণে এসব হচ্ছে।
নির্মাণকাজের সময় সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয় হলো দূষণ। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। আইন থাকলেও সেগুলো কার্যকর হয় না। শাস্তি দেওয়ার বদলে আমি পুরস্কার দেওয়াটা বেশি পছন্দ করি। যে বা যেসব প্রতিষ্ঠান দূষণ করছে না, তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হোক। তাদের ভালো কাজের উদাহরণগুলো তুলে ধরা হোক।
পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কর ছাড়ের মতো উদ্যোগ নেওয়া যায়। তাতে অন্যরা উৎসাহিত হবে। তবে হ্যাঁ, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং দূষণকারী চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ শাস্তির প্রক্রিয়া তো রাখতেই হবে। তা যে খুব বেশি হয়, তা মনে হয় না।
বায়ুদূষণ রোধের মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারা বায়ু, পানিসহ পরিবেশগত নানা দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের খুব কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখি না। তাদের লোকবলের সংকট আছে, সেটা বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু তারপরও যতটুকু কাজ তাদের করার কথা, তা হয় না।
তবে দেশে সামগ্রিকভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের একটি ভিশন বা লক্ষ্য থাকতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। আমরা এমন পরিকল্পনা করতে পারি যে এখন পিএম ২.৫-এর (অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা) মাত্রা ১০ বছরের মধ্যে কমিয়ে আমরা সহনীয় পর্যায়ে আনব। পর্যায়ক্রমে এটি করতে হবে।
২ বছর, ৫ বছর বা ১০ বছরের লক্ষ্য ধরে এগোতে হবে। যেমন আমাদের পাশের দেশ ভারতের দিল্লিতে তারা একটি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করেছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করছে। আমাদের এমন উদ্যোগ নেই।