পৃথিবীতে যে হারে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে মানুষ সুপরিবেশের মধ্যে নয় দূষণ কবলিত পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকবে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ দূষণজনিত কবলে মৃত্যুবরণ করছে। এই দূষণ জনজীবনকে ক্ষতিগস্ত করছে, প্রচুর জীবন ও জানমাল ধ্বংস করছে।
বর্তমানে দূষণগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি-এনভায়রনমেন্টাল অ্যানালাইসিস (সিইএ) ২০১৮ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৫৮% বায়ুদূষণের উৎস ঢাকার আশেপাশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইটের ভাটা। জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস) পোড়ানোর ফলে, শিল্পকারখানা, দহন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঘনঘন রাস্তা খনন, ড্রেনের ময়লা রাস্তায় পাশে উঠিয়ে রাখা, যানবাহনের অসম্পূর্ণ থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের প্যার্টিকুলেট ম্যাটার (চগ২.৫ ও চগ১০), অ্যাশ, ধূলিকণা, সীসা, কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়তই দূষিত করছে বায়ু।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা ৬ এর উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য হানিকর বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া বা গ্যাস নিঃসরণকারী যানবাহন চালানো যাইবে না বা ধোঁয়া বা গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করার লক্ষ্যে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনভাবে উক্ত যানবাহন চালু করা যাইবে না।’
বায়ুদূষণের ক্ষণস্থায়ী সমস্যাগুলোর মধ্যে নাক মুখ জ্বালাপোড়া করা, মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি অন্যতম। ফুসফুসের ক্যান্সার, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, যক্ষা, কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, জন্মগত ত্রুটি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব, হার্ট অ্যাটাক, যকৃত সমস্যা, গর্ভবতী মায়েদের ওপর প্রভাব, চর্মরোগ ও নিউমোনিয়া ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হয়।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকার ১২টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ঢাকার বায়ুতে চগ২.৫ এর পরিমাণ আদর্শ মানমাত্রার চেয়ে অনেকাংশে বেশি। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ধানমন্ডি এলাকার সীসা দূষণের উপরও অন্য এক গবেষণায় ১০ স্থান থেকে নমুনায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
বায়ু দূষণ কমাতে হলে ইটভাটা ও যানবাহনে ক্যাটালাইটিক কনভাটর ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখতে হবে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।