বাংলাদেশে গিভিংটুইসডে বাস্তবায়ন: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
মো. মিকাইল আহমেদ
গত ২রা জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ সময় রাত ৮-০০ ঘটিকায় ‘বাংলাদেশে গিভিংটুইসডে বাস্তবায়ন: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শিরোনামে একটি ওয়েবিনার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়েবিনার আলোচনায় প্রতিবন্ধীদের প্রতি ভাল ব্যবহার ও সদয় আচরণ করা, তাঁদের শিক্ষার সুযোগ ও কর্সংস্থান নিশ্চিত করা, দেশে মানবসৃস্ট কারণ তথা ধূর্ঘটণা জণিত কারণ ও পরিবেশদূষণ জনিত কারণে মানবজাতীর প্রতিবন্ধী হওয়া ও এর হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়া এবং এর প্রতিরোধের উপায় নিয়ে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য অধ্যাপক, শিল্পপতি, বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, আইনজীবী, পরিবেশবিদ, উন্নয়নবিদ, সমাজকর্মী ও নানা শ্রেণীপেশার ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
ওয়েবিনারটির মূল আয়োজক ছিলো প্রতিবন্ধীদের অধিকার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করে ঢাকার মগবাজারের অবস্থিত অর্গানাইজেশন ফর ডিজেবলড ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড রাইটস (ODIR BD – Organization for Disabled Improvement and Rights- ODIR BD)। অনু্ষ্ঠানের মূল সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ও গিভিংটুইসডে বাংলাদেশের আহ্বায়ক জনাব শাকিল আজাদ মনন।
ওয়েবিনারটিতে কো-হোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠানটির দুজন স্বেচ্ছাসেবক মো. ইমতিয়াজ সুলতান এবং মো. মিকাইল আহমেদ। অনু্ষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কোহিনূর আজাদ মৌলি।
প্রোগ্রামটির মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলো পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল Greenpage BD আর কারিগরি সহায়তায় ছিলো এতিম শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে সামাজিক সংগঠন Aid Orphans.
ওয়েবিনারটিতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে হলে করণীয় কী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ”মাস্টারমাইন্ড স্কুল ও কলেজ, ঢাকা” এর শিক্ষক জনাব সালেহ আজাদ।
ওয়েবিনারটিতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের আসাম রাজ্যের বরপেটা জেলার স্বনামধন্য লুইতপারিয়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব ডক্টর শামসুল আলম সোহরাওয়ার্দী। তাঁর কাছে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর পাশাপাশি মানবিক আচরণের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারত একসাথে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেমন বিভিন্ন অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয় তেমনি কর্মক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উপযুক্ত সম্মান ও সুরক্ষা পান না। তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও আশাব্যঞ্জক নয়।।প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পিছিয়ে আছেন, নাকি আমরাই তাঁদের পিছিয়ে রাখছি, সেটাও ভাবতে হবে। কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ধরেও রাখতে হবে। তাঁরা যাতে ঝরে না পড়েন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ওয়েবিনারে উপস্থিত বাংলাদেশ সরকারের Directorate General of Health Services (DGHS) এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ আরফানুল হক ভুইঁয়া। উনার কাছে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ পাওয়া যেমন জরুরি, তেমনি কর্মপরিবেশ ভালো রাখাটাও জরুরি। তাঁরা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে আবার ঝরে পড়বেন।
তিনি আরো বলেন, সদ্য প্রকাশিত প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তুলনামূলক ভালো ফল করেও কোটাবৈষম্যের কারণে প্রতিবন্ধীব্যক্তিরা পদবঞ্চিত হয়েছেন। প্রতিবন্ধীব্যক্তিদের জন্য যথাযথ নিয়োগ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
একথা আমরা সবাই জানি মাতৃগর্ভে বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেক সময় প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়। আবার অনেক সময় মানবসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও কর্মকাণ্ডের কারণে কোনো কোনো সুস্থ মানুষও প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত হন।
মানবসৃষ্ট কারণে প্রতিবন্ধীতা রোধ করতে আমাদের করণীয় কী এবং আমরা কিভাবে এই ক্ষতি কমিয়ে করতে পারি এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ওয়েবিনারে উপস্থিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পরিবেশবিদ জনাব মোঃ মাহফুজুর রহমানের কাছে।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের জন্য নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি একজন প্রকৃতি প্রেমী। এ বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন মানুষ মূলতছ দুটি কারণে মানুষ প্রতিবন্ধী হয়- দূর্ঘটনার কারণে এবং পরিবেশ দূষণের কারণে।
আমরা শুধু দূর্টা জনিত কারণে প্রতিবন্ধী হওয়ার বিষয়টিই জানি এবং এর একটা পরিসংখ্যাণও হিসাব করা হয়। কিন্তু পরিবেশ দূষণের কারণে কত সংখ্যক মানুষ প্রতিবন্ধী হচ্ছে সে বিষয়ে প্রকৃত কোন পরিসংখ্যাণ আমাদের কাছে নাই এবং সে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত।
দূর্ঘটনা করেণে যে প্রতিবন্ধী হচ্ছে তারও মূলে রয়েছে হয়ত পরিবেশ দূষণের কারণে নতুবা সে কারণে পরিবেশ দূষণও হচ্ছে।যেমন, সড়ক দূর্ঘটনার করেণেই সবচেয়ে বেশী মানূষ প্রতিবন্ধী হচ্ছে আর এর কারণ জীবাস্ম জ্বালাণী চালিত মোটর গাড়ী দ্বারা যা বায়ু মন্ডলে মারাত্বক ভাবে দূষণ চড়াচ্ছে।
অথচ মোটর গাড়ীর পরিবর্তে স্বল্প দূরত্বে জ্বালাণী বিহীন যান তথা সাইকেল ব্যবহার করে বা পোয়ে হেটে এবং অধিক দূরত্বে রেল গাড়ীতে ভ্রমণ করলে একদিকে দূর্ঘটণা হ্রাস পায় অপর দিকে পরিবেশেরও দূষণ রোধ করা যায়।
তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণেই মূলত: মানুষের অসময়ে মৃত্যু এবং প্রতিবন্ধী হচ্ছে সবচেয়ে বেশী যা আমরা জানিনা। এ যে মানব শিশূ মার্তৃগর্ভে প্রতিবন্ধী হচ্ছে এর মূল কারণ বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, খাদ্যদূষণ। শিশু যখণ মার্তৃ গর্ভে থাকে তখন মায়ের শরীরে এ ৩টি উৎসের মাধ্যমে মায়ের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ যেমন সিসা, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, মারর্কারী, নিকেল, কার্বণ মন অক্সাইড, ধুলি কণা, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বণ, হাইড্রো কার্বণ, মিথেন ইত্যাদি মায়ের গর্ভে প্রবেশ করা ফলে শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম জন্ম।
জন্ম গ্রহনের পর হতে আবার এ সকল দূষণের কারণে স্বল্প বয়স হতে শুরূ করে পৌাঢ় বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দূষণে আক্রান্ত হয়ে অসমে মৃত্যু ও প্রতিবন্ধী হচ্ছে। উদ্ধাহরণ স্বরুপ তি সিসা বা লিড এর কথা উল্লেখ করেন, যা মার্তৃ গর্ভে শিশুকে বিকালঙ্গ করে, অল্প বয়সে শিশু গ্রহণ করলে হাবাঘোবা, মেধা শক্তি-স্মরণ শক্তি লোপ পায় ও বোকা হয়, বয়স্কদের থাইরয়েড গ্রন্থি আক্রান্ত হয় ইত্যাদি।
তিনি বলেন পৃথিবীতে যত রং আছে ব্ যা উজ্জল্য ও টাটকা রাখে সবই হলো সিসা।তাই রং ও জীবস্মা জ্বালাণী দ্বারাই আমরা সিসায় আক্রান্ত হই সবচেয়ে বেশী। টিন জাতীয় খাদ্য এবং বাসা বাড়ীতে দেওয়াল হতে ঝড়ে পড়া রং ও খেলানার রং দ্বারা শিশুরা সিসায় আক্রান্ত হয় বেশী।
তাই আমাদেরকে সিসার ন্যয় অন্যান্য হেভী মেটাল ও বায়ু দূষণ, পানি দূষণ হ্রাস করাসহ পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। অন্যথায় এ পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব অল্প সময়ে বিলীন হয়ে যাবে
প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি সবাইকে ভাবাচ্ছে তবে আশু কোন সুরাহা হচ্ছেনা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে নীতিনির্ধারকদের আলোচনার টেবিলে কিন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা কেন এই বিষয়ে বক্তব্য রাখেন Autism Support Association of Bangladesh এর কর্ণধার and UN member of Economic and Social Affairs এর International Representative জনাব আরফান শরীফ।
তরুণ ও যুবক জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখনো এই সমস্যা সমাধানে খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি।
সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বিষয়ে সরকারের আলাদা কোন পরিকল্পনা আছে কিনা? তাদের ব্যাপারে সরকার কি ভাবছে? এই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উক্ত ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথি, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপসচিব, Psychologist, Speech Language Pathologist, Urban Planner জনাব তপন কুমার নাথ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। সমাপনী বক্তব্যে সকল প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে একযোগে কাজ করার আশ্বাস ব্যক্ত করেন তিনি।
অনু্ষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতাগণ ও অংশগ্রহণকারীগণের মধ্যে জনাবা নাসিমা ইসলাম চৌধুরী মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। অভিভাবকগণের মধ্যে জনাবা তুলতুল হেলাল উনার মতামত তুলে ধরেন।
আরো বক্তব্য রাখেন গিভিং টুইসডে উদযাপনের রাজশাহী বিভাগীয় লিডার আমিনুল ইসলাম। আরো বক্তব্য দেন সমাজকর্মী মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, বজলুর রহমান, নুরুননবী প্রমুখ।
অনু্ষ্ঠানের সভাপতি কোহিনূর আজাদ মৌলি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে, সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনু্ষ্ঠানটি শেষ করেন। ওয়েবিনারে শিক্ষাবিদ, গুণীজন, উন্নয়নকর্মী, সমাজকর্মী, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।