বসবাসের জন্য অযোগ্য শহর এখন ঢাকা !
খুব অল্প সময়ের মধ্যে দুই কোটি জনসংখ্যার ধাপ পেরিয়ে এখন বিশ্বের ষষ্ঠ জনসংখ্যাবহুল রাজধানী শহর হয়ে উঠেছে ঢাকা। কারও মতে, এই শহরের বয়স ৪০০ বছর, আবার সাম্প্রতিক হিসাবে তা প্রায় এক হাজার বছর।
দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থান আর চারপাশে নদ–নদী থাকায় ঢাকা ছিল স্বাস্থ্যকর এলাকা। তবে গত কয়েক যুগে এই শহরের সবুজ এলাকা ও জলাভূমি হারিয়েছে, আর বাতাস–মাটি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে।
গত এক বছরে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর বসবাসযোগ্যতা নিয়ে যে কয়টি জরিপ হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগেই ঢাকার অবস্থান ছিল তলানিতে। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার অবস্থান ক্রমাগত নিচে নেমেছে।
ঢাকা শহর নিয়ে সম্প্রতি করা কয়েকটি গবেষণায়ও বসবাসের জায়গা হিসেবে ঢাকার এই অবনতি ধরা পড়েছে। এসব গবেষণায় ঢাকায় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগর ব্যবস্থাপনায় নানা সমস্যা উঠে এসেছে।
একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর নগরের জন্য আয়তন অনুযায়ী জনসংখ্যা সীমিত রাখা, গাছপালা ও জলাভূমি রক্ষা করা আর বায়ু–মাটিদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা। এই সবগুলো ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে।
মাত্র ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহর নিয়ে চলতি মাসে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘এনভায়রনমেন্টাল চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে একই ধরনের চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সালেও ঢাকা শহরের ১৭ শতাংশ এলাকা ছিল সবুজ গাছপালায় ঘেরা। বিশ্বের স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর পরিবেশের শহরগুলোতে এই বৈশিষ্ট্য থাকে। কিন্তু ২০২০ সালে অর্থাৎ মাত্র ৩০ বছরে তা মাত্র ২ শতাংশে নেমে এসেছে।
মূলত ২০০৯ সাল থেকে ঢাকার সবুজ ও জলাভূমি এলাকা সবচেয়ে দ্রুত হারে কমেছে। শহরের নতুন আবাসিক এলাকাগুলোতে কিছু কিছু গাছপালা বাড়লেও তা সামগ্রিক চাহিদার তুলনায় খুবই কম। জনসংখ্যার ব্যাপক চাপ ও শহর ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা ও সঠিক বাস্তবায়নের অভাবে এই শহরের সামগ্রিক পরিবেশের দ্রুত অবনতি হচ্ছে।
এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশির ভাগ বৈশ্বিক সূচকে ঢাকার অবস্থানের অবনতি হয়েছে কয়েকটি কারণে।
প্রথমত, এই শহরের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু যাঁরা এই শহরে নতুন করে আসছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দরিদ্র। ফলে তাঁরা আর্থিক কারণে শহরে নিজেরা নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন না।
আবার নগরের সামগ্রিক পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এই শহরকে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় আনার জন্য একের পর এক পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু তার বেশির ভাগের কোনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে শহরের সামগ্রিক পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের অবনতি হচ্ছে।