বর্তমান বিশ্বে আলোচিত বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অন্যতম একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। প্রশ্ন হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কে? পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, যা মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় ৫০ শতাংশ।
এর পরেই রয়েছে রাশিয়া, ভারত, জার্মানি, ব্রাজিল ও অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশ। জনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন করছে অস্ট্রেলিয়া। সে তুলনায় বাংলাদেশে কার্বন নির্গমনের হার অত্যন্ত কম, শতকরা প্রায় শূন্য দশমিক ২ ভাগ মাত্র। এতে বোঝা যায়, উন্নত ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে দায়ী।
অথচ দেখা যাচ্ছে, জলবায়ুর এ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বের এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।
পরিবেশবিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এখানে বন্যা, আকস্মিক বন্যা, ঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, লবণাক্ততা ইত্যাদির মাত্রা বেড়ে যাবে।
উত্তরাঞ্চলে খরা ও মরু প্রবণতা দেখা দেবে এবং দক্ষিণাঞ্চলে ঝড় ও সাইক্লোনের প্রকোপ বাড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠ স্ফীত হলে বাংলাদেশের নদী-মোহনা ও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ওপর নেমে আসবে বিপর্যয়। শত শত বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় ও অন্যান্য নিম্নাঞ্চল অধিক মাত্রায় প্লাবিত হবে।
বন্যার ব্যাপকতায় মানুষের জীবনধারণ, কৃষি, গবাদিপশু, দালানকোঠা ও ভৌত কাঠামো ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হবে। এর প্রমাণ বিগত বছরগুলোর ভয়াবহ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও খরা। এ বছর সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যাও এর আরেকটি প্রমাণ।
উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা এবার আকস্মিকভাবে বন্যাকবলিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানি সংকটের কারণে যেমন বিভিন্ন অঞ্চল মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি উজানের পানির ঢলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন নিঃসন্দেহে এ অবস্থাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।
আইপিসিসির সর্বশেষ গবেষণা থেকে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বর্তমান সময়ের তুলনায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বাড়বে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বর্ষাকালে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় শীতকালে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার হবে বেশি। শীতের তীব্রতা অনেকটাই কমে যাবে, কিন্তু গ্রীষ্মকালে গরমের মাত্রা ক্রমেই বাড়বে। এতে দেশে ছয়টি ঋতুর পরিবর্তে কেবল চারটি ঋতু আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যাবে।
বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাসস্থান হারাবেন। ১ কোটি মানুষ এরই মধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন এবং ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর ৪ লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই জলবায়ু উদ্বাস্তু।
এ অবস্থায় জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। বাঁচাতে হবে বিপন্ন এ পৃথিবীকে। আসুন, আমরা সবাই মিলে সুন্দর এ পৃথিবীটাকে রক্ষা করি এবং বাসযোগ্য করে তুলি।