বর্জ্য দূষিত হচ্ছে শ্রীপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল
গাজীপুরের শ্রীপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র এখন ময়লা–আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শ্রীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগ কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বনের ভেতরে ময়লা–আবর্জনা ফেলা বন্ধ হচ্ছে না। এ কারণে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ।
সম্প্রতি শ্রীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, শ্রীপুর-গোসিংগা সড়ক, শ্রীপুর-রাজাবাড়ী সড়ক, মাওনা–বদনীভাঙা সড়ক, রাজেন্দ্রপুর-ফাউগান সড়ক, টেংরা-সাইটেলিয়া বাজার সড়ক, শিশুপল্লী মোড়, বৃন্দাবন সড়ক, সাতখামাইর-শিশুপল্লী সড়ক, দরগাচালা-নয়নপুর সড়কসহ ভাওয়াল বনাঞ্চলের গভীর পর্যন্ত এমন ময়লার স্তূপ জমে আছে।
শিয়াল, কুকুরসহ বনের পাখি ও অন্যান্য প্রাণী স্তূপ করে রাখা ময়লা–আবর্জনার মধ্য থেকে খাবার খুঁজতে গিয়ে সেসব বনের ভেতরও ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসবের মধ্যে যেমন আছে শিল্পকারখানার বর্জ্য, তেমনি আছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, বাড়িঘরের অপচনশীল বর্জ্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীপুরসহ আশপাশের কলকারখানা ও পৌরসভার বর্জ্য রাতের আঁধারে বনের ভেতরে ফেলে যাওয়া হয়। এসব ময়লার মধ্যে চিকিৎসা বর্জ্যও আছে। ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় এগুলো বনের ভেতর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিদিন ভোরে মিজানুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী শ্রীপুর-রাজাবাড়ী সড়কে প্রায় তিন কিলোমিটার হাঁটতে বের হন। মিজানুর রহমান বলেন, বনের ভেতর ফেলে রাখা বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধে এখন আর হাঁটার সুযোগ নেই। এমন সুন্দর সবুজ বনের ভেতর কীভাবে মানুষ ময়লা ফেলতে পারে।
দরগারচালা গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল মাহমুদ বলেন, রাতের বিভিন্ন সময় ডাম্প ট্রাক ও সাধারণ ট্রাকে করে বনের যত্রতত্র এসব ময়লা ফেলে খুব দ্রুত চলে যায় অজ্ঞাত লোকজন। বর্জ্যের দুর্গন্ধে সড়কে চলাচলকারী লোকজনের ভীষণ কষ্ট হয়।
বৃন্দাবন এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, এক বছর ধরে বনের ভেতরে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লা–আবর্জনা খেয়ে বনের পশুপাখি মারা যায়।
ভিটিপাড়া গ্রামের মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সরকারি জায়গায় ময়লা ফেললে কোনো জবাবদিহি নেই বলেই এই অবস্থা। তিনি আরো বলেন, সাতখামাইর থেকে ভিটিপাড়া পর্যন্ত সড়কে কমপক্ষে ২০টি স্থানে এমন ময়লার স্তূপ রয়েছে।
স্থানীয় বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের বেশ কিছু সংরক্ষিত বনের জমিতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, এমন খবর আমার কাছে এসেছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’
শ্রীপুর পৌরসভার কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর জহির রায়হান বলেন, ‘আমাদের পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। তাই বাধ্য হয়েই কিছু ময়লা লোকজনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ফেলতে হচ্ছে। তবে বনের ক্ষতি করে ময়লা ফেলা হচ্ছে না। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন।’
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেব বলেন, ‘সংরক্ষিত বনের জমিতে বর্জ্য বা ময়লা ফেলা নিষেধ। আমাদের লোকবল সব সময় একটা বড় সমস্যা।
রাত বা দিনের কোনো সময়ে আমাদের অগোচরে ময়লার ফেলে যাচ্ছে কোনো একটি চক্র। আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি কারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। শনাক্ত করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’