বন্ধ করা যাচ্ছেনা পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার
পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে সরকার উল্টো পথে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, একসময় প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া পলিথিন ব্যাগে এখন বাজার ভর্তি। পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে বাজার তদারকিও নেই।
বুধবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘সাসটেইনিবিলিটি শর্টস’ শীর্ষক সংলাপে রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন। সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ সাসটেইনিবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ)।
প্লাস্টিক দূষণের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে উন্নয়ন সংস্থা এবং স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি মিলে অ্যালায়েন্স গঠন করেছে।
সংলাপে ‘প্লাস্টিক দূষণ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাতে বলা হয়, ২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যাগকে নিষিদ্ধ করে।
২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মার্কেটগুলো প্রায় পলিথিনমুক্ত করে ফেলে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনে বলা আছে, ১৪টা পণ্যে পলিথিন প্যাকেট দেওয়া যাবে না। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।’
প্লাস্টিক নিয়ে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে বলে মনে করেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি প্লাস্টিক সস্তা। কিন্তু লবণ, চিনি, মাছের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
আমার-আপনার পেটের ভেতরেও প্লাস্টিক প্রবেশ করতে শুরু করেছে। মায়ের দুধেও প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কম দামের প্লাস্টিকে সাময়িক লাভ হয়তো হচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির পরিমাণই বেশি।’
পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে মন্তব্য করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে বাজার তদারকি নেই।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ থাকে কম। প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। পরিবেশের কোনো সমস্যা সমাধান করা যায়নি।
বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণের বড় উৎস সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (একবার ব্যবহার উপযোগী)। পাতলা প্লাস্টিকের মোড়ক, কফির কাপ, ঢাকনা ও চামচ, স্ট্র ও পলিথিন ব্যাগ—এই সবকিছুই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক। দেশে এসব প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে।
তবে দেশেই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের যথেষ্ট বিকল্প রয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেশি দায়িত্ব উৎপাদকদেরই নিতে হবে।
ভোক্তাদের আচরণে বদল আনার দায়িত্বও উৎপাদকদের। তাদের প্লাস্টিকের বিকল্প দিতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাদা আইন প্রয়োজন।