বিষয়ঃ বঙ্গবন্ধুর পরিবেশ ও জলবায়ু উন্নয়নের চিন্তা-ভাবনা
“এ প্রতিযোগিতায়: স্পনসর চাই”
উপক্রমণিকা:
‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ, লোষ্ট্র, কাঠ ও প্রস্তর।’
প্রাণের বিকাশের সংঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মানুষকে মমতা দিয়ে আগলে রাখে পরিবেশ। জন্মলগ্ন থেকে জন্মস্থানের পরিবেশে পালিত মানুষ জন্মস্থানের প্রতি আত্মস্থ, অভ্যস্থ হয়ে যায়।
এই পরিবেশকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। প্রতিটি সভ্যতার অস্তিত্ব নির্ভর করে সেখানকার জলবায়ুর উপর। প্রতিকূল পরিবেশ ও জলবায়ুতে কোনো জীব বাঁচতে পারে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পরিবেশের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
যিনি যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; আমাদের জাতির পিতা।
তিনি সর্বপ্রথম উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়ন শুরু করেন যা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুদ্ধে বাংলাদেশের অন্যতম প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু: জন্ম ও বংশ পরিচয়:
বিশ্ব সম্মোহনীদের নামের তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সর্বাগ্রে। বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ সাবেক ফরিদপুর এবং বর্তমান গোপালঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি পিতামাতার তৃতীয় সন্তান।
পরিবেশ ও জলবায়ু উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা:
বিশ শতকের শুরুতে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই উন্নয়নের চূড়ান্ত গন্তব্য বলে বিবেচিত হচ্ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ শুষে নিয়ে অর্থনীতির পাত্রকে টইটুম্বুর রাখার লক্ষ্যে মানুষ নিত্যনতুন উপায় আবিষ্কার করেছিল।
কয়েক দশক পরে মানুষ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে শুরু করলো যে অর্থনীতি নয় বরং প্রাণ-প্রকৃতিই পৃথিবীর জীবনীশক্তি। উন্নয়নের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত মাত্রাগুলোর যথাযথ সমন্বয় এবং একীভূতকরণের মাধ্যমেই শুধুমাত্র কাঙ্খিত টেকসই উন্নয়ন (SDG) অর্জন করা সম্ভব।
ষাটের দশকে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতার সাংগঠনিক প্রকাশ শুরু হয়। ছোট্ট একটি পরাধীন রাষ্ট্র তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে ওঠার জন্য প্রাণপণে লড়ছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অসম্ভব দূরদর্শী এক দীপ্ত-পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনার পরে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরেই তিনি শুরু করলেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া একটি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অসম্ভব এক কর্মযজ্ঞ।
সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এই মহামানব তাঁর বিচক্ষণতায় উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, এই দেশের মূল সম্পদ এর সুজলা সুফলা উর্বর পরিবেশ ও প্রাণিবৈচিত্র এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। তাই ভবিষ্যৎ বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনঃ
- দেশের বন্যপ্রাণীর গুরুত্ব উপলব্ধি করে এদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বঙ্গবন্ধু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেন।
- বঙ্গবন্ধুর পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৫ সালে দেশে ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়।
- যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে বঙ্গবন্ধু খুব কম সময় পেলেও তিনি দূরদর্শিতার পরিচয় দেন, যার মধ্যে প্রকৃতি, জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণ উল্লেখযোগ্য।
- বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বৃক্ষরোপনে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু গণভবন, বঙ্গভবনসহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগান।
- পাশাপাশি দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে দেশের বৃক্ষ সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছিল তা থেকে উত্তরণের জন্য বঙ্গবন্ধু দেশজুড়ে বৃক্ষরোপন অভিযান শুরু করেন।
- ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের ঘোড়দৌড় বন্ধ করে গাছ লাগিয়ে সুদৃশ্য উদ্যান তৈরি করেন যার নাম হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
- বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ও পতিত জমিতে বৃক্ষরোপনের আহ্বান জানান।
- বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই শুরু হয় উপকূলীয় বনায়ন যা বাংলাদেশকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।
- সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুই দেশের হাওড়-বাঁওড়, নদ-নদী ও অন্যান্য জলাভূমি উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করেন।
- প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে জাতীয়করণ ও আধুনিকায়ন করা হয় বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন।
উপসংহার:
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। অত্যন্ত দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এই দেশের মূল সম্পদ সুজলা, সুফলা উর্বর প্রকৃতি ও প্রাণিবৈচিত্র।
‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’ এ স্লোগান প্রচলন হওয়ার বহু পূর্বেই বঙ্গবন্ধু বৃক্ষরোপন শুরু করেন। তিনিই প্রথম উপকূলে বনায়ন শুরু করেন যা অন্যতম প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য এই যে, স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু বেঁচে ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর।
কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।
বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে এবং বাংলাদেশে নগরায়ন নামক আমাদের স্বেচ্ছাচারী আক্রমণের ফলে দিনদিন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। এজন্য বঙ্গবন্ধুর মতো দূরদর্শী কার্যকরী পদক্ষেপ এখনি নিতে হবে। এজন্য আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিৎ-
এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।