প্লাস্টিক বর্জ্যই প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের
শহরে বছরে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। তিন লাখ টন প্লাস্টিক নদীর পাড় এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির নিচে ও পাড়ে ফেলে দেওয়া হয়। দেশের শতকরা ৪০ ভাগ তরুণ প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকে। প্লাস্টিক বর্জ্য জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান একটি কারণ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্লাস্টিক দূষণে বাংলাদেশ: উত্তরণের উপায়” শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানান বক্তারা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
সবুজ আন্দোলনের তথ্য ও গবেষণা পরিষদ থেকে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত দেশের ২০টি জেলার ১০০ জন ব্যক্তির ওপর প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার এবং দূষণ সম্পর্কে জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করেন। তবে ২ ভাগ মানুষ এখনও কাচ ও মাটির তৈরি পণ্য ব্যবহার করেন।’
বাপ্পি সরদার বলেন, সাগরে পতিত প্লাস্টিক পণ্যে সূর্য রশ্মির বিকিরণ ঘটে, ফলে মাইক্রো প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়ে মাছের শরীরে প্রবেশ করে। অতিরিক্ত প্লাস্টিক পণ্য সাগরে পতিত হওয়ায় প্রায় ৮৫০ প্রজাতির জলজ প্রাণী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ পাখি প্লাস্টিক দূষণের শিকার হয়।
প্রতিবছর মাথাপিছু একজন ব্যক্তি ১৮ কেজি পলিথিন ব্যবহার করে। শহরে বছরে ৮ দশমিক ৫ লাখ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পলিথিন উৎপন্ন হয়। ৩ লাখ টন প্লাস্টিক নদীর পাড় ও উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির নিচে ও পাড়ে ফেলে দেওয়া হয়। দেশের শতকরা ৪০ ভাগ তরুণ প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকেন।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবগুলো হলো‑ বিভাগীয় শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রোধে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে।
পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও ক্রেতা পর্যায়ে দাম কমানো এবং কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সমুদ্র, নদী ও জলাশয়ে প্লাস্টিক পণ্য ফেলা এবং সারাদেশের বাজার, পাবলিক প্লেসে ডাস্টবিন নির্মাণ করতে হবে। প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্র, গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. একেএম নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ প্লানার্স ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আদিল মোহাম্মদ খান, আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা অ্যাড. আব্দুল কুদ্দুস বাদল।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, পরিচালক নাদিয়া নূর তনু, নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান বাবু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সবুজ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহতাব হোসাইন মাজেদ, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক সমীরণ রায়, গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুব সোহেল।