31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৩:৪০ | ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
প্লাস্টিক দূষণের ফলে ক্রেডিট কার্ডের সমমান প্লাস্টিক খাচ্ছে মানুষ
পরিবেশ দূষণ

প্লাস্টিক দূষণের ফলে ক্রেডিট কার্ডের সমমান প্লাস্টিক খাচ্ছে মানুষ

প্লাস্টিক দূষণের ফলে ক্রেডিট কার্ডের সমমান প্লাস্টিক খাচ্ছে মানুষ

প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা সারা বিশ্বেই বাড়ছে। ১৯৫০ সাল থেকেই শিল্প খাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৪০ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদন হচ্ছে, যার মধ্যে প্রায় 8০ লাখ টন প্লাস্টিক সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। এসব প্লাস্টিকের স্থায়িত্ব প্রকৃতিতে অনেক দিন থাকে।

জীববিজ্ঞানী রিচার্ড থম্পসন প্রায় ৩০ বছর আগে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করেন। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের আইল অব ম্যান সৈকত পরিষ্কারের সময় রিচার্ড থম্পসন বিভিন্ন রঙের বালুর খোঁজ পান।

সৈকতে রঙিন বালুর খোঁজ পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হন তিনি। সেই বালুর রহস্য উন্মোচন করার সময়েই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার সন্ধান পান রিচার্ড থম্পসন।

পরবর্তী ১০ বছর সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে সেই রঙিন বালু নিয়ে গবেষণা করে তিনি বলেন,‘মাইক্রোপ্লাস্টিক কখন যে সমুদ্রসৈকতগুলো দখল করে নিয়েছে, তা মানুষ টেরই পায়নি। শুধু সমুদ্র পরিষ্কার কিংবা বায়োডিগ্রেডেবল (জীবানুবিয়োজ্য) প্লাস্টিক ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী এ সংকটের প্রভাব কমানো যাবে না।’



২০০৪ সালে বিজ্ঞানী আন্দ্রেয়া রাসেলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রথম মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার পরিচয় প্রকাশ করেন রিচার্ড থম্পসন। তাঁরা জানান, প্লাস্টিক সমুদ্রে প্রবেশ করার পর ধীরে ধীরে ছোট আর টুকরা টুকরা হয়ে যায়। আরও দূরে ছড়িয়ে পড়ে। সেই গবেষণাপত্র নিয়ে কানাডার সংসদেও আলোচনা করা হয়।

মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে সেই গবেষণার পর যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ প্রসাধনীসহ বিভিন্ন শিল্প খাতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ব্যাগের ওপরে কর আরোপসহ প্লাস্টিক ব্যবহারের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেয়।

নিজেদের গবেষণার বিষয়ে রিচার্ড থম্পসন বলেন, ‘বর্তমানে ন্যানো প্লাস্টিক নামের ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুকরা মানুষের রক্ত, গর্ভ আর বুকের দুধেও অনুপ্রবেশ করছে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশের মানুষ প্রতি সপ্তাহে একটি ক্রেডিট কার্ডের সমান প্লাস্টিকের কণা কোনো না কোনো উপায়ে খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে।

বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়লেও প্লাস্টিকের ক্ষতি থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে না। সাধারণভাবে একটি ক্রেডিট কার্ডের আকার প্রস্থে ৮৫ দশমিক ৬০ মিলিমিটার ও লম্বায় ৫৩ দশমিক ৯৮ মিলিমিটার হয়। এই পরিমাণ প্লাস্টিক প্রতি সপ্তাহে মানুষ কোনো না কোনোভাবে খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করছে।’

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলগুলোও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পরিবেশবিজ্ঞানী সামশাদ নওরীন বলেন, ‘মাইক্রোপ্লাস্টিকের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

আমরা নদীমাতৃক দেশ, আমাদের দেশে বর্জ্যব্যবস্থাপনা আধুনিক নয়। এ কারণে নদীর মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য সরাসরি সমুদ্রে চলে যায়। এতে আমাদের নদী ও সমুদ্র উপকূলের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে মাছ, সেই মাছ মানুষ খাচ্ছে। আবার নদী ও সমুদ্রের মাছ পাখিদের খাদ্যশৃঙ্খলে থাকার কারণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাখিরাও খাবারের সঙ্গে খাচ্ছে। এতে আমাদের সমুদ্রের মাছের পরিবেশ, ডলফিনসহ সুন্দরবনের পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।’

মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশে কয়েক শ বছর টিকে থাকে, যে কারণে বেশি মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। বিজ্ঞানী রিচার্ড থম্পসন বলেন, ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক বড় আকারের প্লাস্টিকগুলো থেকে তৈরি হচ্ছে।



ভাঙা টুকরা বা আকারে বালুর সমান হলেও সামুদ্রিক প্রাণীদের দেহে প্রবেশ করে বড় ক্ষতি করছে। এখন সামুদ্রিক প্রাণীরাও মাইক্রোপ্লাস্টিক খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে। আর্কটিক সাগরসহ সারা বিশ্বের কয়েক ডজন সৈকতের বালুর নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক অপসারণের প্রযুক্তি তেমন কাজে আসছে না।

মহাসাগর পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়গুলোর প্রভাব খুবই কম। মাইক্রোপ্লাস্টিক অনেক বড় হুমকি। আসলে এমনভাবে এসব কণা পরিষ্কার করা যাবে না। সমাধান হিসেবে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এ ব্যাগ সামুদ্রিক পরিবেশে তিন বছর পরও একইভাবে অবস্থান করে।

প্লাস্টিকের বিকল্প বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য ও বায়োভিত্তিক প্লাস্টিকের মতো বিকল্প নতুন করে দূষণ ছড়াচ্ছে। এসব পণ্য কেবল কার্বন উৎস প্রতিস্থাপন করছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা আরও বাড়বে।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত