টাংগুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওর।স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এই হাওর। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাংগুয়ার হাওর মাছ, পাখিসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।
টাংগুয়ার হাওর ভরা রয়েছে প্রকৃতির অকৃপণ দানে। আর এই হাওর শুধু একটি জলমহাল বা মাছ প্রতিপালন, সংরক্ষণ এবং আহরণেরই স্থান নয়।অন্যদিকে এটি একটি মাদার ফিশারী। হিজল করচের দৃষ্টি নন্দন সারি এ হাওরকে করেছে মোহনীয়। এ ছাড়াও নলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শোলা, হেলঞ্চা, শতমূলি, শীতলপাটি, স্বর্ণলতা, বনতুলসী ইত্যাদি সহ দু’শ প্রজাতিরও বেশী গাছগাছালী রয়েছে এ প্রতিবেশ অঞ্চলে।কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন পর্যটকদের আনাগোনায় ও তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকার ধোঁয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুখীন।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হাওরের প্রকৃতির ওপর।
২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা হয় হাওরকে। যদিও হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নেওয়া সেই সময়ের পদক্ষেপগুলো হাওরকে সংকট থেকে উত্তরণের পরিবর্তে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
এখানে জীববৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং হাজারেরও বেশি প্রজাতির প্রাণী। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ৫১ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ চিহ্নিত করা হয়।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের তীরবর্তী মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে হাওরকে ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নৌকায় করে হাওর দর্শনকরা হয়। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন আসছেন পর্যটক।হাওরে ঘুরতে আসা এসব পর্যটকরা পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা অবাধে ফেলেন হাওরের পানিতে। এতে দিন দিন দূষিত হচ্ছে হাওরের পানির স্বচ্ছতা। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে হাওরের মাছ, গাছ, পাখিসহ প্রাণীবৈচিত্র্যের ওপর।তাছাড়া হাওরের বৈচিত্র্যের দিকে খেয়াল না করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় হাওরজুড়ে ঘুরে বেড়ান হাজারো পর্যটক।