প্রতিবছর ৫.৮ মিলিমিটার হারে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
দেশে ৩০ বছর ধরে উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চ বৃদ্ধি নিয়ে চলমান একটি গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার বৃদ্ধি, ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আবাদি জমি হ্রাস বিষয়ে সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আজকের বৈঠকে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ–সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি জানানো হয়। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি জানানো হয়।
এই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি নিরূপণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) সহায়তায় ‘প্রজেকশন অব সি লেভেল রাইজ অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্টস অব ইটস সেক্টোরাল (অ্যাগ্রিকালচার, ওয়াটার অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার) ইমপ্যাক্ট’ শীর্ষক একটি গবেষণা কার্যক্রম চলছে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে ইতিমধ্যে গবেষণার খসড়া ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ৩.৮ থেকে ৫.৮ মিলিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, ওই গবেষণার মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাপ ও এর ফলে কৃষি, পানি ও অবকাঠামো খাতে কী প্রভাব পড়বে, তা নিরূপণ করা হচ্ছে। যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে যেমন গোপালগঞ্জ অঞ্চলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্য সংস্থাগুলোকে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সম্পূর্ণ গবেষণাটি চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দেশের উত্তরাঞ্চলে বজ্রপাত রোধে বন অধিদপ্তরের চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৭ হাজার ৭৭৩টি তালের চারা রোপণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা, সমুদ্র ও নদী মোহনায় জেগে ওঠা চর স্থায়ীকরণের জন্য ১৯৬৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর উপকূলীয় বনায়ন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর ভূমি জনগণের বসবাস ও চাষাবাদের উপযোগী হওয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়কে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বালুমহাল ও জলমহালের সীমানা এবং মালিকানা নির্ধারণ, বালু উত্তোলন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে ভূমি, পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্রুত সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করে কমিটি।
বৈঠকে বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান ও বার্তা বিভাগের পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মচারীদের পদোন্নতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আ স ম ফিরোজ, হাফিজ আহমদ মজুমদার, পনির উদ্দিন আহমেদ, ফেরদৌসী ইসলাম ও মোকাব্বির খান অংশ নেন।