26 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ৮:৪৪ | ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
প্রতিটি সেন্টিমিটার সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ার জন্য, এক মিলিয়নেরও বেশী মানুষকে উপকূল হতে সরিয়ে নিতে হবে
আন্তর্জাতিক পরিবেশ পরিবেশ বিজ্ঞান রহমান মাহফুজ

প্রতিটি সেন্টিমিটার সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ার জন্য, এক মিলিয়নেরও বেশী মানুষকে উপকূল হতে সরিয়ে নিতে হবে

প্রতিটি সেন্টিমিটার সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ার জন্য, এক মিলিয়নেরও বেশী মানুষকে উপকূল হতে সরিয়ে নিতে হবে

রহমান মাহফুজ, প্রকৌশলী, পরিবেশ কর্মী, পরিবেশ এবং পরিবেশ অর্থনৈতিক কলামিষ্ট, সংগঠক এবং সমাজসেবী।
বাংলারূপ: রহমান মাহফুজ

কয়েক মিলিয়ন জলবায়ু উদ্বাস্তু, হারিয়ে যাওয়া প্রজাতি এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য মাছের ঘাটতি – জলবায়ু গবেষকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন বিশ্বব্যাপী কার্বণ নির্গমন হ্রাস করা না গেলে এটিই হবে আমাদের নিকটতম ভবিষ্যত।

নরওয়ের জারকনেস সেন্টার ফর ক্লাইমেট গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক টোরে ফুরেভিক উত্তরমেরুতে দ্রুত উষ্ণায়নের বিষয়ে সতর্ক করেন।ছবিতে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলরেখার উপরে কুলুসুক দ্বীপের নিকটে আইসবার্গের একটি আকাশ হতে নেয়া দৃশ্য রয়েছে, যেখানে দ্রুত বরফ ক্ষয় হওয়ার তীব্রতা দেখা যাচ্ছে। ((Photo: NASA Goddard Space Flight Center)
নরওয়ের জারকনেস সেন্টার ফর ক্লাইমেট গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক টোরে ফুরেভিক উত্তরমেরুতে দ্রুত উষ্ণায়নের বিষয়ে সতর্ক করেন।ছবিতে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলরেখার উপরে কুলুসুক দ্বীপের নিকটে আইসবার্গের একটি আকাশ হতে নেয়া দৃশ্য রয়েছে, যেখানে দ্রুত বরফ ক্ষয় হওয়ার তীব্রতা দেখা যাচ্ছে। ((Photo: NASA Goddard Space Flight Center)

জলবায়ু গবেষক টরে ফুরেভিক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “উত্তর মেরুর পরিবর্তনগুলো দ্রুত ঘটছে। প্রতি সেকেন্ডে আমরা বায়ুমণ্ডলে ১৩০০ টন CO2 নির্গত করছি এবং নির্গত CO2 বায়ুমণ্ডলের গঠন (composition) পরিবর্তন করছে।



আমরা এখন শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব মোকা্বলা করছি যা পৃথিবী লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বায়ুমন্ডলে নির্গত করেছে।”

ওএসসিই সংসদীয় বৈঠক (Organization for Security and Co-operation in Europe Parliamentary Assembly) কর্তৃক আয়োজিত একটি ওয়েবিনারের বিতর্ক চলাকালীন নরওয়ের জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র বিরকনেস সেন্টারের পরিচালক তোরে ফুরেভিক উত্তর মেরুর দ্রুত উষ্ণায়নের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন যে “উত্তর মেরুতে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবগুরলা আরও ভালভাবে আমাদেরকে বুঝতে হবে।”

তিনি বর্ণনা করেছেন কিভাবে জলবায়ু গবেষকরা উত্তর মেরুর অন্বেষণ করতে এবং মেরু সমুদ্রের বরফের পরিবর্তিত আকার এবং পুরুত্ব পরিমাপ করতে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি উপগ্রহ এবং মডেলগুলো ব্যবহার করে।

তারা আরও দেখতে পেল যে গ্রীনল্যান্ডের বৃহৎ আইস ক্যাপটি সমুদ্রের মধ্যে গলে যাওয়ার সাথে সাথে মহাকর্ষ শক্তির পরিবর্তন ঘটে।

খুবই রক্ষণশীল

যে অধ্যাপক একজন সহকর্মীর সাথে মিলিত হয়ে ২০০০ সালে সমুদ্রের বরফ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন তিনি বলেছিলেন, “আমাদের কমপক্ষে ২০ বছর ধরে এই জ্ঞান ছিল।”

এই প্রতিবেদনটিকে “বরফ বিহীন উত্তর মেরু (Arctic without ice) “বলা হয়েছিল এবং এই বিষয়টি তখন এত নতুন ছিল যে এটি বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম হয়েছিল।”

ওএসসিই পিএ'র উত্তর মেরু সমস্যা সম্পর্কিত বিশেষ কমিটির প্রতিনিধি, টরিল ইডশিম (নরওয়েজিয়ান কনজারভেটিভ পার্টি)। (Photo: Storting)
ওএসসিই পিএ’র উত্তর মেরু সমস্যা সম্পর্কিত বিশেষ কমিটির প্রতিনিধি, টরিল ইডশিম (নরওয়েজিয়ান কনজারভেটিভ পার্টি)। (Photo: Storting)

পরস্পর সহযোগিতা দরকার

উত্তর মেরু ইস্যুগুলোতে ওএসসিই পিএর বিশেষ প্রতিনিধি, টরিল আইডশিম (নরওয়েজিয়ান কনজারভেটিভ পার্টি) বলেছেন, ইহা খুবই প্রয়োজনীয় যে উত্তর মেরুতে কি ঘটছে ওআরএসইয়ের সংসদীয় সম্মেলনে ইহাকে অন্তর্ভূক্ত করা।

”কড মাছের মতো প্রজাতিগুলো পূর্ব এবং উত্তর দিকে রাশিয়ান উত্তর মেরুর দিকে সরে যাবে।”
কড মাছ
কড মাছ

জলবায়ু গবেষক টরে ফুরেভিক

আইডশিম বলেছিলেন, ”এমনকি নরওয়ের লোকেরাও, যারা উত্তর মেরুর প্রকৃতির কাছাকাছি বাস করছে তারা সহজেই উত্তর মেরুতে কি ঘটছে তা অনুমান করতে পারে। আপনি যদি এমন একটি দেশে বাস করেন যেখানে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সুরক্ষা হুমকির মুখে রয়েছে, তার চেয়ে উত্তর মেরু আরও বেশি নাজুঁক মনে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “তবে এই পরিবর্তনগুলো আসলে ঘটছে এবং সেগুলো আমাদের সকলকে প্রভাবিত করছে। এমূর্হুত্বে এ বিষয়ে একটি সংসদীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ।“

আটলান্টিফিকেশন জলবায়ু

ফুরেভিক বলেছেন যে, “মাত্র দুই দশকের মধ্যে উত্তর মেরুর উষ্ণায়ন ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি সত্যি নাটকীয়। আমাদের চোখের সামনে সমুদ্রের বরফ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। আমরা ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি এবং পোল্যান্ডের মিলিত অঞ্চলগুলোর চেয়ে এখন পর্যন্ত বেশি সমুদ্রের বরফ হারিয়েছি ।”

আমরা সমুদ্রের বরফের নীচে জলের বড় পরিবর্তনগুলোও দেখতে পাই, যেখানে সতেজ ঠান্ডা উত্তর মেরুর জল আরও বেশি নোনতাযুক্ত, উষ্ণ আটলান্টিক জলের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে।

জলবায়ু গবেষকরা এটিকে আটলান্টিফিকেশন জলবায়ু বলে অভিহিত করছেন।

“প্রতি সেকেন্ডে সাতটি অলিম্পিক আকারের সুইমিং পুল”

ফুরেভিক বলেছেন, “৪০ বছর আগে সমুদ্রের বরফ কঠিন এবং ঘন ছিল। এখন এটি পাতলা এবং ভঙ্গুর। তদুপরি, সমস্ত দুনিয়ার হিমবাহ গলে যাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ড গলে যাচ্ছে।

অ্যান্টার্কটিকা গলে যাচ্ছে। আমরা অনুপাতগুলো কল্পনা করতে পারি না, তবে প্রতি সেকেন্ডে সাতটি অলিম্পিক আকারের সুইমিং পুল সমান বরফ গলে যাচ্ছে।”

বিশ্ববাসীর জন্য এর অর্থ কি? এর অর্থ সমুদ্রের পানির স্তর আমাদের কল্পনার চেয়েও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতি ১ সেন্টিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য দশ লক্ষাধিক মানুষকে উপকূলীয় অঞ্চল হতে সরিয়ে নিতে হবে।

কম লবনাক্ত সমুদ্র

ওয়েবিনারের বিতর্ক চলাকালীন ওএসসিই পিএর সহ-সভাপতি মার্গারেটা সিডফেল্ট প্রশ্ন করেন, “যখন সমুদ্রগুলোর পানি কম লবণযুক্ত হবে তখন জলের গুণমান কিভাবে আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে?”

ফুরেভিকের জবাব, “যখন গরম এবং বেশি নোনতা পানির পরিবর্তে ঠান্ডা এবং মিঠা পানি হবে তখন বাস্তুতন্ত্র (ecosystem ) তাতে সাড়া দেবে। কড মাছের মতো উত্তর সমুদ্রের লবনাক্ত পানির মাছের প্রজাতিগুলো পূর্ব এবং উত্তরে রাশিয়ান উত্তর মেরুর দিকে চলে যাবে। এতে উত্তর আটলান্টিক সংলগ্ন দেশসমূহে মাছের সংকট সৃষ্টি হবে।

উষ্ণায়নের ফলে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন হবে এবং আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের কয়েকটি মৎস প্রজাতি হারাব। আসল বিষয়টি হ’ল বিশ্বব্যাপী এত বিশাল জনগোষ্ঠীকে খাবারের জন্য আমাদের কাছে ভবিষ্যতে কম মাছ থাকবে।”

সুতরাং উত্তর মেরুর জলবায়ু পরিবর্তনকে হ্রাস করতে ওএসসিই সংসদ সদস্যরা কি করতে পারেন? বিজ্ঞানের আলোকে কার্বণ নি:সরণ হ্রাসের দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করা – দুটি মূল বিষয় বাস্তবায়ন করা।



কার্বণ নি:সরণ হ্রাসকরণ

ডেনিশ পার্লামেন্টের পিটার জুয়েল-জেনসেন (লিবারেল পার্টি) বলেছেন, “আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব  দেশের সংসদে এই বিষয়গুলো হাইলাইট করতে পারি। আমরা যদি এখন কালো শক্তি ব্যবহার বন্ধ না করি তবে আমাদের সন্তানদের জন্য ভবিষ্যত কালো হয়ে উঠবে।”

জুয়েল-জেনসেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ৭০ শতাংশ কার্বণ নির্গমন হ্রাস করতে চান, তবে সতর্ক করেছেন যে এটি ব্যয়বহুল হবে।

জুয়েল-জেনসেন বর্ণনা করেন, “ কিন্তু আমরা অনেক দেরী করে ফেলেছি। জ্বালাণী তেল ও গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং বাতাস কল ও নীল শক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

আমরা যত লম্বা সময় ধরে কথা বলব, কোন কিছুই হবে না । বরং আমরা আমাদের সন্তানদের সাধারণ জীবন যাপনকে ধ্বংস করে দিব।”

একটি জিনিসই করতে হবে

“জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে কমিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক পর্যায়ে কি – কিছু করা যায়?”

টোর ফুরেভিকের সুস্পষ্ট জবাব, “কেবলমাত্র একটি জিনিস যা এই বিকাশকে ধীর করতে পারে এবং তা হ’ল গ্রীনহাউস গ্যাসের নির্গমন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করা।”

Source: HIGH NORTH NEWS
মূল: TRINE JONASSEN

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত