পুরস্কৃত করা হবে পরিবেশবান্ধব ৩০ প্রতিষ্ঠানকে
দেশের ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ তথা ‘পরিবেশবান্ধব কারখানা পুরস্কার’ দিতে যাচ্ছে সরকার। কারখানার কর্মপরিবেশ ভালো এবং পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার চালু করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
তৈরি পোশাক খাত, চা, প্লাস্টিক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ—এই ৬ খাত থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পাবে।
পুরস্কার বিজয়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকার চেকসহ একটি করে মেডেল, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হবে। পুরস্কারটি দেওয়া হবে আগামী ৮ ডিসেম্বর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চ্যুয়াল উপায়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কার প্রদানের কথা রয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিব বর্ষকে গৌরবোজ্জ্বল এবং স্মরণীয় করে রাখতে এই পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিবছরই পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার জন্য সরকার একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর তৈরি পোশাক খাত, চা, প্লাস্টিক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ—এই ৬ খাত থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
পুরস্কারের জন্য নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব কর্মপরিবেশ সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে গঠন করা হয়েছে ১২ সদস্যের একটি মূল্যায়ন কমিটি। তাদের মতামতের ভিত্তিতে ৩০টি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
প্রথমবারে তৈরি পোশাক খাত থেকে পুরস্কারের জন্য ১৫টি কারখানা নির্বাচন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে রেমি হোল্ডিংস, তারাসিমা অ্যাপারেলস, প্লামি ফ্যাশনস্, মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, এ আর জিনস প্রোডিউসার, করণী নিট কম্পোজিট, ডিজাইনার ফ্যাশন, ক্যানপার্ক বাংলাদেশ অ্যাপারেল, গ্রিন টেক্সটাইল (ইউনিট-৩), ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, উইজডম অ্যাটায়ার্স, মাহমুদা অ্যাটায়ার্স, স্মোটেক্স আউটারওয়্যার ও অকো-টেক্স।
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে নির্বাচিত ৩টি প্রতিষ্ঠান হলো হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস। হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো হচ্ছে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
এ প্রসঙ্গে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, হবিগঞ্জে যখন এ কারখানা করা হয়, তখন পরিবেশের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের যাতে কম ব্যবহার হয়, সে জন্য কারখানায় যথেষ্ট উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে।
শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে। কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ভালো। সে কারণেই হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে।
চা–শিল্প খাতের নির্বাচিত চার প্রতিষ্ঠান হলো গাজীপুর চা–বাগান, লস্করপুর চা–বাগান, জাগছড়া চা কারখানা ও নেপচুন চা–বাগান। চামড়াজাত পণ্য খাতে নির্বাচিত দুটি শিল্পকারখানা হলো অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও এডিশন ফুটওয়্যার।
প্লাস্টিক খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস, অলপ্লাস্ট বাংলাদেশ ও ডিউরেবল প্লাস্টিক। এ ছাড়া ওষুধশিল্প খাত থেকে নির্বাচিত তিন প্রতিষ্ঠান হলো স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কারখানা নির্মাণে কী ধরনের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, কারখানায় সূর্যের আলো কী পরিমাণ ব্যবহার হয়, সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার করা হয় কি না—এসব বিষয় দেখা হয়েছে।
এ ছাড়া একটি কারখানায় জীবন ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কতটা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, কক্ষে আলোর ব্যবস্থা, সহনীয় শব্দমাত্রা এবং আরামদায়ক উষ্ণতাও দেখা হয়েছে। কারখানায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা হয় কি না, নিবন্ধিত চিকিৎসক ও নার্স আছে কি না, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা আছে কি না, তা-ও দেখা হয়েছে।
এ ছাড়া কারখানার মালিক নিয়মিত কর দেন কি না, নিয়মিতভাবে বিভিন্ন উপযোগ সেবার বিল পরিশোধ করেন কি না, দেখা হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিরূপণ এবং শ্রমিকদের বিনোদন ও তাঁদের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয় কি না, এসব বিষয়ও দেখা হয়েছে।