32 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ১:৫১ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পানির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ইছমতির আপন চেহারা
বাংলাদেশ পরিবেশ

পানির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ইছমতির আপন চেহারা

পানির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ইছমতির আপন চেহারা

নদীর নাম ইছামতি। এক সময় এই নদীতে দিন-রাত শোনা যেত লঞ্চ ও জাহাজের সাইরেন। পদ্মা নদীর সঙ্গে ইছামতির সংযোগ থাকায় নদীতে ছিল তীব্র স্রোত।

স্রোতের তীব্রতায় নদীর গর্ভে চলে যায় মানুষের বসত বাড়ি, হাট বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নদী ভাঙন থেকে মানুষের বসত ঘরবাড়ি রক্ষার্থে ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

তবে সেই বেঁড়িবাঁধে পর্যাপ্ত জলকপাট (স্লুইসগেট) না থাকায় বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা হতে কাঁশিয়াখালি বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদীপথে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙ্গন ও বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে ইছামতি নদীতে ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে দোহারের অরঙ্গাবাদ থেকে মানিকগঞ্জের হাটিপাড়া বংখুরী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ নির্মাণ করা হয়। যে বাঁধটি ঢাকা জেলা দক্ষিণ রক্ষা বেড়ি বাঁধ নামে পরিচিত।

বেঁড়িবাধের কারণে সে যাত্রায় নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষা পেলেও সেই বেঁড়িবাধই এখন ইছামতি নদী মরার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদক্ষতা ও অপরিকল্পতায় বাঁধের ইছামতি-পদ্মা নদীর সংযোগ স্থলে জলকপাট (স্লুইসগেট) স্থাপন না করা এবং বহু বছরেও নদীটি ড্রেজিং না করায় ইছামতি এখন বিলুপ্তির পথে।



পানির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ইছমতির আপন চেহারা। এতে সমস্যায় পড়েছে স্থানীয় পাঁচ হাজার জেলে পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার সদস্য। সে সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজারও পেশার মানুষ।

আর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার উপর।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাঁশিয়াখালী বেড়িবাঁধ রক্ষা মঞ্চ, সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরম, ইছামতি বাঁচাও আন্দোলন ও স্থানীয় বাসিন্দারা মূল নদীতে জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সব সময়ই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

এছাড়া নদীর কূল ঘেঁষে যত্রতত্র হাট-বাজার বা ব্যক্তিগত ক্লিনিক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে নদীতে। এর ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও নদীর পানি।

ক্লিনিক বা বাজারের বর্জ্য ও ময়লার স্তূপ জমে আছে নদীর বুকে, পচা গন্ধে নদীর কাছেও যাওয়া যায় না। নদী পথ বন্ধ হওয়ায় অবহেলিত ইছামতি এখন ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাসবিনে পরিণত হয়েছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছিক নবাবগঞ্জের এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, ক্লিনিক বা বাজারের মালিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে বজ্য ফেলে নদীর পানির দূষিত করছে। কিন্ত প্রশাসন ব্যাপারটা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে না। প্রশাসনকে বিষয়টি তাড়াতাড়ি আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

নদী জুড়ে কচুরী পানা জলকপাট অভাবে পানি প্রভাহ না থাকায় ইছামতী নদীর করুন দশা। তাই নদী রয়েছে কচুরী পানার দখলে।

কচুরী পানার কারনে এবছর বাংলা ভাদ্র মাসের ঐতিহ্যবাহী শিকারীপাড়া ইউনিয়নের দাউদপুরে ইছামতি নদীর নৌকা বাইচসহ কয়েকটি স্থানের বাইচ আয়োজন পন্ড হতে পারেন বলে শষ্কায় রয়েছেন নৌকা বাইচ কমিটি। নদীর এমন করুন দশায় হতাশ হয়েছে স্থানীয়রাও।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা জেলার অন্যতম বৃহত্তম কোঠাবাড়ীর বিলে আজ পানির অভাবে ধান চাষ করতে পারছেন না কৃষকরা। এক সময় এই বিলেই চাষ হতো লাখ লাখ হেক্টর ইরি-বোরো ধান।

বিলের পানির উৎপাদিত ধানই নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলাবাসীর চালের চাহিদা মেটাতো। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে জেলেরা এ বিলের পানিতে রাত-দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকতো।

আর সেই মাছ বিক্রি করেই সংসার চলতো জেলে পরিবারগুলোর। এখানে পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির হরেক রকম সুস্বাদু মাছ। কিন্তু এখন মাছ পাওয়া তো দূরের কথা দেখা দিয়েছে পানির চরম অভাব।



বান্দুরার মৎস্যজীবী হালদার বলেন, আমার পূর্ব পুরুষের পেশা মাছ শিকার। আমার মত শত শত পরিবার আছে বান্দুরায় যারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্ত এখন নদীতে নামা যায় না।

পানি পচে র্দুগন্ধ বের হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। কোথাও আবার জমে থাকা কচুরিপানায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নদীর পানি।

নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, নদী মরে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্য, কৃষিকাজ ও মৎস্য আহরণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রয়োজন নদীমুখে জলকপাট।

তিনি আরও বলেন, ইছামতি নদীতে আমরা প্রতিবছর মানুষকে বিনোদন দেয়ার জন্য বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। এবছর নদীতে শোত না থাকায় কচুরি পানায় ছেয়ে গেছে নৌকা বাইচ আয়োজন নিয়ে দুচিন্তায় আছি।

এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর ঢাকা বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মতিন সরকার বলেন, ২০১০ সালে এই বাঁধে ৬টি স্লুইসগেট, ইছামতি নদীর ৭২ কিলোমিটার খনন এবং আড়িয়াল বিলের ৬টি খাল খননসহ সমন্নয় পানি নিষ্কাশন নামে একটি প্রকল্প উপর মহলে জমা দেওয়া আছে পাস হয়ে এলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

নবাবগঞ্জ উপজেললা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মতিউর রহমান বলেন, ইছামতি নদী খনন বা স্লুইসগেট নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ঢাকা-১ আসনের এমপি সালমান এফ রহমানের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ইছামতি নদী নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। কাঁশিয়াখালি বেড়িবাঁধে দুটি স্লুইসগেট রয়েছে নদীর স্বার্থে আরও স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত