31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:৪৬ | ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পানিদূষণ ফলে হুমকির মুখে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য
পরিবেশ দূষণ

পানিদূষণ ফলে হুমকির মুখে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য

পানিদূষণ ফলে হুমকির মুখে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য

মানুষের কার্যকলাপের ফলে জলাশয়ে সৃষ্ট দূষণই হলো পানিদূষণ। জলাশয় বলতে হ্রদ, নদী, সমুদ্র, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তরকে বোঝায়। স্বাভাবিক পরিবেশে পানিতে দূষণকারী পদার্থ উপস্থিত থাকলে তাকে পানিদূষণ বলা হয়।

অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়, তবে তা জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে পারে। এর ফলে ভাটির দিকে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তারা এই দূষিত পানি পান এবং গোসলের কাজে অথবা সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারে। পানিবাহিত রোগের প্রকোপে সারা বিশ্বে যত মানুষ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, তাদের বেশিরভাগই ঘটে পানি দূষণের কারণে।

বহু সময় ধরে ক্রমবর্ধ্বিত কাজের ফলেই দূষণ সৃষ্টি হয়। দূষিত জলাশয়ে থাকা অথবা এর সংস্পর্শে আসা সমস্ত গাছ এবং জীবই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দূষণের ফলে একক প্রজাতিগুলো ধ্বংস হতে পারে এবং এরা যে স্বাভাবিক জৈব সংগঠনের অন্তর্গত তারও ক্ষতি হতে পারে।

পানি দূষণের কারণ হিসেবে প্রচুর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ও রোগ-জীবাণুর কথা বলা যেতে পারে। তাছাড়া অনেক ভৌত স্থিতিমাপও রয়েছে। দূষকগুলো জৈব অথবা অজৈব পদার্থের হতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রাও দূষিত পানির কারণ হতে পারে।



তাপীয় দূষণের একটি সাধারণ কারণ হলো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং শিল্পোৎপাদন কেন্দ্রে কুল্যান্ট হিসেবে পানির ব্যবহার। উচ্চ জলীয় তাপমাত্রা অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে মাছ মারা যায়। এতে খাদ্যশৃঙ্খলের উপাদান পরিবর্তিত হয়, প্রজাতির বাস্তুতন্ত্র কমে আসে এবং তাপের ফলে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়ার নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়।

পানির নমুনা বিশ্লেষণ করে পানিদূষণ পরিমাপ করা হয়। ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈব পরীক্ষা করা হতে পারে। সঠিক পরিকাঠামো ও পরিচালনা পরিকল্পনার দ্বারাই পানিদূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

পরিকাঠামোর মধ্যে থাকতে পারে বর্জ্যপানি পরিশোধক কারখানা। বর্জ্যনিকাশী পরিশোধক কারখানা ও শিল্পজাত বর্জ্যপানির পরিশোধক কারখানা অশোধিত বর্জ্যপানির হাত থেকে জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে পারে। কৃষিখামারের ক্ষেত্রে কৃষিজ বর্জ্যপানি পরিশোধন এবং নির্মাণ স্থানে ভূমিক্ষয় রোধের ব্যবস্থাও পানিদূষণ প্রতিরোধ করতে পারে।

পানিদূষণ রোধের আরেকটি উপায় হলো প্রকৃতিকেন্দ্রিক সমাধান। স্রোতের গতি এবং এর পরিমাণ কমিয়ে শহরের নিকাশী ব্যবস্থার কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পানি দূষণের জন্য সেরা পরিচালনা ব্যবস্থা হিসেবে পানির পরিমাণ কমানো এবং পানির মান উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পানি যদি মানুষবাহিত দূষক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই পানিকে দূষিত বলা হয়। এসব দূষকের ফলে এই পানি মানুষের পানের ও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাছাড়া মাছ ও জলজ প্রাণীর জীবনধারণ হুমকি মুখে পড়ে।

আগ্নেয়গিরি, শৈবাল পুষ্প, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনার ফলেও পানির গুণাগুণে এবং এর বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন দেখা দেয়।

পানিদূষণ একটি বিশ্বব্যাপী গুরুতর সমস্যা। এর জন্য সর্বস্তরে পানিসম্পদ নীতির মূল্যায়ন এবং পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। মনে করা হয়, বিশ্বে যত রোগ ও মৃত্যু হয়, তার মুখ্য কারণ হলো পানি দূষণ।



বৈশ্বিক সামুদ্রিক পরিবেশগত সমীক্ষা নামক সংস্থার মতে, পানিদূষণ হলো অন্যতম প্রধান একটি পরিবেশগত সমস্যা যেটা পরবর্তী দশকগুলোতে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে দিতে পারে।

ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন যেগুলো ৭০% অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং পৃথিবীর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের একটি বড় অংশ শোষণ করে, পানিদূষণ তাদের জন্য একটি অন্যতম সমস্যা।

প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রের বড় বড় বলয়ের মধ্যে আটকে পড়ে। প্লাস্টিক আবর্জনাগুলো সামুদ্রিক দূষণে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থগুলোকে শোষণ করে নেয় যার ফলে সামুদ্রিক জীব এগুলো খেয়ে ফেললে তাদের শরীরেও বিষ প্রবেশ করতে পারে।

এসব দীর্ঘজীবী পদার্থগুলো অনেক সময়েই শেষমেশ সামুদ্রিক পাখি এবং প্রাণীদের পেটে চলে যায়। এর ফলে তাদের হজমের পথ আটকে যায়। যার ফলে তাদের খিদে কমে যায় অথবা এর থেকে তারা অনাহারেও ভুগতে পারে। মূল দূষক ছাড়াও, অনেক ধরনের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে।

যেমন ভূপৃষ্ঠে পানির স্রোতে পলি ভেসে থাকলে পানিস্তম্ভের মধ্য দিয়ে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে না এবং এর ফলে জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

উন্নত দেশের শহরে, পৌরসভার বর্জ্যজল, শোধনকারী কারখানা দ্বারা বিশেষভাবে পরিশোধিত হয়। ভালোভাবে পরিকল্পিত এবং পরিচালিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ৯০ শতাংশ বা তার বেশি দূষণকারী পদার্থ থেকে দূর করা যায়।

কোনো কোনো কারখানায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা থাকে যাতে রাসায়নিক উপাদান এবং রোগ সংক্রামক জীবাণু দূর করা যেতে পারে, কিন্তু এসব আরও উন্নত শোধনমূলক পদক্ষেপ ক্রমশই আরও বেশি ব্যযবহুল হয়ে পড়ছে।

কেন্দ্রীভূত শোধনকারী কারখানার পরিবর্তে পরিবেশভিত্তিক সমাধানও ব্যবহার করা হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লো-ইমপ্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট প্রযুক্তিরও ব্যবহার করা যেতে পারে। সবুজ ছাদ স্থাপন ও রাসায়নিকের উন্নত ও পরিমিত ব্যবহার কমাতে পারে পানি দূষণের হার।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত