পাথরঘাটা এবং মঠবাড়িয়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে
বরগুনার পাথরঘাটা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৩টি কাঠকয়লা কারখানার ১৫টি চুল্লির দূষণে ঘনবসতিপূর্ণ ৯টি গ্রামের মানুষ ভুগছে। নদীর পাড়সহ লোকালয়ে এসব কারখানা গড়ে ওঠায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে ওই ৯ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে এসব কারখানা চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামে আটটি চুল্লি নিয়ে জাহাঙ্গীর হাওলাদারের একটি কারখানা ও রায়হানপুর ইউনিয়নের মাদারতলী গ্রামে তিনটি চুল্লি নিয়ে ফজলুল রহমান সরদারের একটি কাঠকয়লা কারখানা রয়েছে।
বকুলতলা গ্রামের পাশের মঠবাড়িয়া উপজেলার নলী জয়নগর গ্রামে চারটি চুল্লি নিয়ে রিপন খানের একটি কাঠকয়লা কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার কারণে মাদারতলী, চরকখোলা, কড়ইতলা, জামিরতলা, নলী-জয়নগর, নাচনাপাড়া, বকুলতলা, উত্তর চরদুয়ানী ও দক্ষিণ কাঠালতলী গ্রামের মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসী বলছেন, কারখানাগুলোর অদূরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ-মন্দির ও হাটবাজার রয়েছে। কারখানার দূষণে গ্রামের বাসিন্দাসহ স্কুলগামী শিক্ষার্থী, স্থানীয় হাটবাজারের লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছে। এলাকায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বন থেকে অবৈধভাবে এসব কাঠ সংগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ আছে।
পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া বাজার থেকে পিপুলিয়া বাজার সড়ক ধরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষজন চলাচল করে। ওই এলাকার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদারতলী গ্রামসংলগ্ন বিষখালী নদীর পাড়ের কারখানাটিতে তিনটি চুল্লি রয়েছে।
ওই চুল্লিতে যখন আগুন দিয়ে কাঠ পোড়ানো হয়, তখন এ পথ দিয়ে চলাচল তো দূরের কথা, এ গ্রামসহ আশপাশের দুই–এক গ্রামে থাকাই মুশকিল।
একই কথা জানিয়েছেন উপজেলার বকুলতলা গ্রামের ও মঠবাড়িয়া উপজেলার নলী জয়নগর গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরা বলেন, হলতা নদীসংলগ্ন জয়নগর গ্রামে কারখানার চারটি চুল্লি ও কাঠালতলীর বকুলতলাসংলগ্ন বলেশ্বর নদের পাড়ে কাঠকয়লা কারখানার আটটি চুল্লি রয়েছে।
এসব চুল্লিতে যখন কাঠ পোড়ানো হয়, তখন আশপাশের মানুষের দম ফেলাই মুশকিল হয়ে যায়। তখন বাতাসে প্রচুর পরিমাণে দূষিত ধোঁয়া ছড়ায়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কারখানার চুল্লিতে প্রতিনিয়ত কাঠ পোড়ানো হয়। একেকটি চুল্লিতে প্রায় ৪০০ মণ কাঠ টানা ৫ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত নিবু নিবু জ্বলতে থাকে। এ থেকে প্রায় ২৫০ মণ কয়লা উৎপাদিত হয়। এসব কয়লা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার হোটেল ও স্টিল মিলে ব্যবহৃত হয়।
বিষখালী নদীসংলগ্ন মাদারতলী গ্রামে ও বলেশ্বর নদসংলগ্ন বকুলতলা গ্রামে দেখা গেছে, চুল্লিগুলোর মধ্যে সারি সারি কাঠের গুঁড়ি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। চুলার চারপাশেও কাঠের গুঁড়ি রাখা আছে। একটি চুলার গা ঘেঁষে চটের বস্তা ভর্তি করে রাখা হয়েছে কয়লা। বিশাল আকৃতির চুলাগুলো দুই–চার দিনের মধ্যেই আগুন জ্বালানো হবে বলে জানান শ্রমিকেরা।
মাদারতরী গ্রামের কাঠকয়লা কারখানার মালিক ফজলুল রহমান সর্দার বলেন, তাঁর এ কারখানার ছাড়পত্র চেয়ে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। তবে এ কারখানায় পরিবেশের খুব বেশি ক্ষতি হয় না।
বকুলতলা গ্রামের কাঠকয়লা কারখানার মালিক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, কারখানার জন্য ছাড়পত্র চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা আছে।
বরিশাল বেলার সমন্নয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, কাঠকয়লা কারখানায় কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করা হয়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কারখানামালিকেরা প্রতিনিয়িত এভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছেন, যা আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল হক বলেন, বনাঞ্চল থেকে কেউ কাঠ পাচার করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন ও পরিবেশের ক্ষতি করে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটার ইউএনও হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ।