34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১০:১৭ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা
বাংলাদেশ পরিবেশ

পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা

পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা

বায়ু দূষণের তালিকায় সপ্তাহ জুড়ে শীর্ষে অবস্থান করেছে ঢাকা। বলা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ হয়েছে গত এক সপ্তাহে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আর পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, বায়ুদূষণ রোধে কাজ চলছে। কাজ তরান্বিত করতে নেওয়া হয়েছে অনেকগুলো পদক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী আজ শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) বায়ু দূষণের মানমাত্রায় তৃতীয় স্থানে আছে ঢাকা। আজ দুপুর একটায় মানমাত্রা ছিল ১৯০। বিশেষজ্ঞদের মতে এ মানমাত্রাও খুবই অস্বাস্থ্যকর।

সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক পর্যবেক্ষণে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই পাঁচ বছরের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরের প্রথম ৮ দিনে ঢাকায় বায়ু মান সূচকে দূষণ ছিল ১৮১। ২০১৭ সালে ছিল ১৮৯, ২০১৮ সালে ২০৭, ২০১৯ ছিল ১৭৩। এর বিপরীতে চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে বায়ুমান সূচক বেড়ে গিয়ে ২৩৭ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ২০১৯ সালের তুলনায়  প্রায় ৩৭ ভাগ বেশি।

এদিকে চলতি বছরের নভেম্বরে মান সূচকে দূষণের গড় মাত্রা ছিল ১৬৩। নভেম্বরের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪৫ দশমিক ৩৫ ভাগ বায়ু দূষণ বেড়েছে ডিসেম্বরে।

বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার  বলেন, ‘তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যে, গত পাঁচ বছর ধরে ডিসেম্বর মাসে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবনের সৌভাগ্য হয়নি। অস্বাস্থ্যকর থেকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ুমান অবস্থা বিরাজ করেছে।

আরও আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, গত পাঁচ বছরের তুলনায় অস্বাস্থ্যকর দিনের সংখ্যা বেড়েছে। এদিকে গত পাঁচ বছরে বায়ু মান সূচকে কখনোই দূষণের মাত্রা দুর্যোগপূর্ণ হয়নি। সেখানে গত ছয় ডিসেম্বর তা দুর্যোগপূর্ণ, অর্থাৎ বায়ুমান সূচকে ৩১০ উঠেছিল।’

বায়ু দূষণের মাত্রা দু’শো ছাড়ালে বিশেষজ্ঞরা বলেন এটি মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। আর তিন’শো ছাড়ালে বলা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা অযোগ্যের অতি নিকটে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনক্সাইড, মার্কারি ও লেডের মতো ভারী পদার্থ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এগুলো ফুসফুস ও হৃদরোগ, যকৃতের সমস্যা ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিশু ও বয়স্কদের জন্যও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

এদিকে, গত বছর ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের কারণ খুঁজে বের করা এবং বায়ুদূষণ রোধে ও কমাতে নীতিমালা প্রণয়নে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিবকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের আদেশ দেন।

কোর্টের আদেশে মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধি আছেন।

এদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তারা বায়ু দূষণের কারণ হিসেবে ২০টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এসব কারণ চিহ্নিত করে কাজও শুরু হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে-

  • ১.ইটভাটা,
  • ২.রাস্তা নির্মাণ, পুণঃ নির্মাণ এবং মেরামত,
  • ৩.সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণ, পূণঃ নির্মাণ এবং মেরামতের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি,
  • ৪. বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর (যেমন, এক্সপেসওয়ে, মেট্রোরেল) কাজ,
  • ৫. সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ,
  • ৬. সড়ক বা মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন ও সংগ্রহ, ট্রাক বা লরিতে বালু, মাটি, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় পরিবহন,
  • ৭. রাস্তায় গৃহস্থালী ও পৌর বর্জ্য স্তূপাকারে রাখা এবং বর্জ্য পোড়ানো,
  • ৮. রাস্তার পাশের ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা,
  • ৯.হাতে ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো,
  • ১০.বিভিন্ন সড়কের পাশে অনেক অনাবৃত স্থান থেকেও বায়ু দূষণ,
  • ১১.ফুটপাত ও রাস্তার ডিভাইডারের আইল্যান্ডের মাঝখানের ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশের মাটি ও ধুলাবালি,
  • ১২.তীব্র যানজট এবং ফিটনেস বিহীন পরিবহন থেকে ক্ষতিকর ধোয়া নিঃসরণ,
  • ১৩. বিভিন্ন যানবাহনে এ সঙ্গে চাকার সঙ্গে যুক্ত কাদামাটি রাস্তায় ছড়ানো,
  • ১৪. বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকার কলোনির ময়লা আবর্জনা পোড়ানো,
  • ১৫. বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল এবং বাণিজ্যিক ভবনের ময়লা আবর্জনা ও ধুলোবালি রাস্তায় ফেলে দেওয়া,
  • ১৬. ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ প্রবণ এলাকার ধুলোবালি,
  • ১৭. হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা,
  • ১৮. অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার করা এবং
  • ১৯. সর্বশেষ জনসচেতনতার অভাব।

মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, সম্প্রতি বায়ু দূষণ বেড়ে যাওয়ায় এই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি একটি সভা করে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এই সভায় কাজগুলো মনিটরিং জোরদার করতে আলাদা আলাদা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বায়ু দূষণ রোধে যে কারণগুলো দায়ী সেগুলোকে আগেই চিহ্নিত করে কাজ করা হচ্ছিলো।

এখন সেই কারণগুলোকে আলাদা আলাদা করে সাব কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। কমিটিগুলো তাহলে প্রত্যেকটি বিষয়ে আলাদা করে মনিটরিং করতে পারবে। এতে কাজের গতি বাড়বে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত