বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু পাটচাষে অত্যন্ত উপযুক্ত।পাট একটি প্রাকৃতিক তন্তু এবং এটা বাংলাদেশের কৃষিপণ্য শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।স্বাধীনতার পরে পাট ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে আবার পাটের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাট ও পাটপণ্য শুধু পরিবেশবান্ধব এবং সহজে পচনশীলই নয় এটা পরিবেশকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে।
পাট কৃষিজ ফসল এবং ‘ঈ’ ঞুঢ়ব উদ্ভিদ, তাই দ্রুত চযড়ঃড়ংুহঃযবংরং হয় বলে এর উৎপাদনকাল ১২০ দিন। ইরড়-সধংং উৎপাদন পাটের ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রতি হেক্টরে ৯৮ কেজি, অন্যসব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মাত্র ২৮ কেজি, তাই পাট দ্রুত বৃদ্ধিশীল বৃক্ষও বটে।বনায়ন বা বৃক্ষ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে অন্যতম উপায় হলেও পাটের অবস্থান অন্যান্যের চেয়ে অধিক সাশ্রয়ী। এটা ৎবহবধিনষব ংড়ঁৎপব ড়ভ নরড়সধংং হিসেবে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিটি পাটগাছে ১১০-১২০ পাটপাতা থাকে এবং প্রতি হেক্টর পাটচাষ ১৫ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং ১১ টন অক্সিজেন বিতরণ করে। অপরদিকে পাটচাষে জমির খরমহড় সধংং সৃষ্টির ফলে উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশ রক্ষায় এবং উন্নত হাইড্রোকার্বন মুক্ত জুট ব্লেচিং অয়েল উন্নয়ন, জুট ফাইবারকে বিশেষ রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্নিরোধী পাটজাত বস্ত্র উৎপাদন, পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন ব্যাগের বিকল্প স্বল্পব্যয়ে পাটের ব্যাগ তৈরি এবং দেশের নার্সারিগুলোতে গাছের চারা সংরক্ষণে পাটের ব্যাগ (নার্সারি পট) উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তাছাড়া পাট কাটিংস ও নিম্নমানের পাটের সাথে নির্দিষ্ট অনুপাতে নারিকেলের ছোবড়ার সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয় পরিবেশবান্ধব এবং ব্যয়সাশ্রয়ী জুট জিওটেক্সটাইল।যা ভূমিক্ষয় রোধ, রাস্তা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদীর পাড় রক্ষা ও পাহাড়ধস রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে পাটের গুরুত্ব অপরিসীম। পাট ফসলের মূল মাটির ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি বা তার বেশি গভীরে প্রবেশ করে মাটির উপরিস্তরে সৃষ্ট শক্ত ‘প্লাউপ্যান’ ভেঙে দিয়ে এর নিচে তলিয়ে যাওয়া অজৈব খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে মাটির ওপরের স্তরে মিশিয়ে দেয়। ফলে অন্যান্য অগভীরমূলি ফসলের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ সহজ হয় এবং মাটির ভৌত অবস্থার উন্নয়ন ঘটে।
এছাড়া পাট ফসল কর্তনের পর জমিতে যে পাটগাছের গোড়াসহ শিকড় থেকে যায় তা পরে পচে মাটির সঙ্গে মিশে জৈব সার যোগ করে, এতে পরবর্তী ফসল উৎপাদনের সময় সারের খরচ কম লাগে। প্রতি বছর গড়ে ৯৫৬.৩৮ হাজার টন পাট পাতা ও ৪২৩.৪০ হাজার টন পাটগাছের শিকড় মাটির সঙ্গে মিশে যায়, যা জমির উর্বরতা ও মাটির গুণগত মান বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রভাব রাখে। এ কারণে যে জমিতে পাট চাষ হয়, সেখানে অন্যান্য ফসলের ফলনও ভালো হয়।
পরিবেশবিদদের মতে, প্রতিটি দেশেই মোট ভূমির তুলনায় ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। পাট একটি আঁশ উৎপাদনকারী মাঠ ফসল যা বনভূমির মতো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ভূমিকা রাখতে পারে। পাটকাঠি জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ও পেপার পাল্প তৈরিতে ব্যবহৃত হাওয়ায় বন উজাড়ের হাত থেকে কিছুটা হলেও পরিবেশ রক্ষা পায়।
বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। পাটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি, চাষ সম্প্রসারণ, গুণগতমান উন্নয়ন এবং পাট শিল্পকে সুরক্ষা দিতে অনুধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রেখে পাট আইন-২০১৭ মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এর ফলে পাটজাত পন্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সারের সঙ্গে আরও ১১টি পণ্যের সরবরাহ ও বিতরণে কৃত্রিম মোড়কের ব্যবহারজনিত কারণে সৃষ্টি পরিবেশ দূষণরোধকল্পে বাধ্যতামূলকভাবে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।