পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার পাকিস্তানের এক জেলে গোষ্ঠী
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাকিস্তানের এক জেলে সম্প্রদায়ের প্রাচীন সংস্কৃতি আজ প্রায় বিপন্ন৷ মাছের অভাবে হ্রদের উপর ভাসমান এই গ্রামের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে মানচার হ্রদের উপর শুধু হাউসবোট নিয়ে মোহানা জেলে সম্প্রদায়ের ভাসমান গ্রাম৷ বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরেই মোহানারা নৌকার উপর বাসা বেঁধে থাকেন৷
কিন্তু সম্পতি মানচার হ্রদের ইকোসিস্টেমের অবনতির ফলে জেলেদের অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা অনেক বেড়ে চলেছে৷ ভাসমান গ্রামের বাসিন্দা হুসনা মাই বলেন. এখানেই আমার জন্ম এবং এখানেই বিয়ে হয়েছে৷
আমার সন্তানরাও এখানে বড় হয়েছে৷ আমার ৮ সন্তান৷ আমার স্বামী বধির, সেজন্য আমি তাঁর সঙ্গে মাছ ধরতে যাই৷ এক কিলো মাছ পেলে বিক্রি করে সন্তানদের জন্য রুটি ক্রয় করি৷
মনোরম সৌন্দর্যের জন্য কাশ্মীরের আরেক নাম ভূস্বর্গ৷ ভূস্বর্গের এক অংশ পাকিস্তানে৷ সেখানে গেলেও মুগ্ধই হতে হয়৷
নৌকার এই গ্রামে মৌলিক পরিষেবারও অনেক অভাব রয়েছে৷ এক ঘরের বোট হাউসে রান্নার জন্য ছোট এক চুলা রয়েছে৷ হ্রদের আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে চুলার জন্য কাঠ-খড়ি সংগ্রহ করতে হয়৷
চরম আবহাওয়ার কারণে কাঠের নৌকায় থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠছে৷ ভাসমান গ্রামের বাসিন্দা খেরি মাই বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টি হলে আমাদের শিশুরা এবং জিনিসপত্র ভিজে যায়৷ সে সময় রান্নাও করতে পারি না৷ তখন খালি পেটে তাদের দিন পার করতে হয়৷’
হুসনা মাই বলেন, যে হ্রদের পানি পান করার যোগ্য নয়৷ পরিষ্কার পানীয় জল কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই৷ তিনি আরো বলেন, ‘শিশুদের ক্ষুধা কে সইতে পারে! কেউ নয়৷
পানি কিনলে শিশুদের জন্য খাবার কেনার মতো টাকা আর থাকবে না৷ ফলে বাধ্য হয়ে শিশুদের দূষিত পানি খেতে দিতে হয়৷ কাছাকাছি কোনো হাসপাতালও নেই, স্কুলও নেই৷ পানির কোনো ফিল্টারও নেই৷’
এককালে মানচার হ্রদ জীববৈচিত্র্যের জন্য বেশ বিখ্যাত ছিল৷ মানুষ, মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও পাখি মিলেমিশে সেখানে বাস করতো৷ কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য হ্রদের পানি দূষিত করে তোলে৷
এমন দূষণের কারনে মাছের সংখ্যাও অনেক কমে গেছে৷ ফলে বাধ্য হয়ে মোহানাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে৷ মাছ ব্যবসায়ী গুলাম আকবর বলেন, ‘পানি দূষিত হবার আগে প্রতিদিন ২০টি মাছ ভরা ডাটসান ট্রাক পাঠানো হতো৷ অর্থাৎ দিনে প্রায় ৩৭,০০০ কিলো মাছ ধরা হতো৷ এখন সেই পরিমাণ কমে ১,১০০ থেকে ১,৮০০ কিলো হয়েছে৷’
সিন্ধু নদীর পশ্চিমে প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মানচার লেক অবস্থিত৷ সম্ভবত মোহেঞ্জোদারো সভ্যতার সময় থেকেই সেই হ্রদে বোট হাউসে বসবাসের ঐতিহ্য চলে আসছে৷