পরিবেশ বাঁচাতে আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি আইন রয়েছে। তবে পরিবেশ আইন ও নীতির কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশগত আইনের শাসন দরকার, যা শুধু আইনের যথাযথ প্রয়োগই বাড়াবে না বরং টেকসই পরিবেশের প্রচারও সহজতর করবে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক সেমিনারে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইনের ভূমিকা এবং পরিবেশগত সুশাসন শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক সারোয়ার পরিবেশগত শাসনের প্রচার এবং এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জনে পরিবেশগত আইনের শাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। প্রবন্ধে উঠে এসেছে গত এক থেকে দেড় বছরের জরিপ অনুযায়ী পরিবেশদূষণের কারণে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের অধিকারের প্রচার এবং এসডিজি অর্জনের জন্য পরিবেশগত শাসন গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ারের প্রবন্ধে উঠে এসেছে পরিবেশগত আইনের শাসন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ওপর নির্মিত।
এগুলো হলো শক্তিশালী আইনি কাঠামো, কার্যকর রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং বিচারিক প্রতিষ্ঠান, তথ্য এবং ন্যায়বিচারের উপস্থিতি। করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য আইনের শাসন গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কথা ছিল উন্নয়ন হবে কিন্তু দূষণ হবে না। কিন্তু উন্নয়নের কারণে শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও দূষণের মাত্রা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন পরিবেশবিদ ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের পরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েছে ৬০ ভাগ, আর শব্দদূষণ বেড়েছে প্রায় ৩৪ ভাগ। ২০২৩ সালের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে আমি দেখেছি এই বায়ু ও শব্দদূষণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা শহর থেকে গ্রামে নিশ্চিত করা সম্ভব হলেও এর টেকসই মাত্রা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি কি না, এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।’
বক্তারা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় শুধু আইন নয়, ব্যক্তিগতভাবেও সবাইকে সচেতন হয়ে উঠতে হবে, গণমাধ্যমকে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
আইন যা আছে, সেগুলোর প্রয়োগ করা না হলে পরবর্তী সময়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আইন দিয়ে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি টিম গঠন করে পরিবেশগত পুলিশ ও বিসিএসের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে পরিবেশ কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বলেন বক্তারা। এ ছাড়া খেলার মাঠগুলো সরকারিভাবেই দখলের সম্মুখীন হচ্ছে।
চার হাজার কোটি টাকা খরচের পরও বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. সাঈদা নাসরিন বলেন, ‘আমরা সুবিধা করতে গিয়ে অনেক সময় পরিবেশের বিপদ ডেকে আনি। যেমন হাজারীবাগের ট্যানারি।
এটি ভালোর জন্য করা হলেও এর ফলে শীতলক্ষ্যা নদীর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আর আমাদের কোর্ট পরিবেশের জন্য যথেষ্ট আন্তরিক, কিন্তু সুনির্দিষ্ট আইন না থাকার কারণে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবেশের জন্য অনেক আইন আছে, কিন্তু এদের প্রয়োগ নেই।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাপার অর্থ, বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, উন্নয়নকে আরও টেকসই করে তুলতে পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ জন্য পরিবেশগত আইন বাস্তবায়ন ও এর প্রয়োগ করতে হবে। আরও কঠোর হতে হবে।