পরিবেশ দূষণের কারণে আমাদের যেসব ক্ষতি হতে পারে
বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে রাজধানী ঢাকা অন্যতম।গত তিন চার মাস থেকেই রাজধানীর পরিবেশ বেশি অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। রাস্তায় নামলেই মনে হয় রাস্তাগুলোতে যেন ধুলার রাজত্ব।
আবার পানি দূষণ, শব্দ দূষণ,যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণেও প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। জানা যায়, রাস্তায় খোঁড়াখুড়ি আর বিভিন্ন নির্মানযজ্ঞের কাজ থেকেই এই ধুলাবালির সৃষ্টি। এছাড়াও যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইটভাটার কালো ধোঁয়া প্রভৃতি বায়ুতে মিশে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে রাজধানীর বাতাস।
সাধারনত শীতের সময়টাতেই এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়।যদিও এবারে শীতের অনেকটা আগ থেকেই এ সমস্যাটা শুরু হয়েছে।ধূলিকণা রাস্তায় বেশি থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রাজধানী বাসিন্দারা।ফলে রাজধানীজুড়ে দেখা দিচ্ছে অ্যাজমা, সিওপিডি(ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমুনারি ডিজিজ), এআরআই (অ্যাকিউট রেসপারেটরি ইনফেকশন)এর মতো বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।আর এর শিকার বেশি হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা।
এছাড়াও পানি দূষণ, শব্দ দূষণসহ বিভিন্ন ভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং এর কারণে বিভন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ।আসুন নিচের তথ্য থেকে আমরা জেনে নেই এদের দ্বারা কি কি ভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত এবং স্নায়ুর ক্ষতি
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে সীসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ক্ষতি
দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। এসব এলাকার দূষিত বায়ু এবং পানির কারণে তার নিজের এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বায়ু দূষণে চোখ, শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান লরেন্স বের্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি বলছে, রাসায়নিক মিশ্রণ আছে, এমন দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বায়ু দূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ক্যান্সার ও হৃদরোগ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে বা এরকম পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি করতে পারে।
পানি দূষণের প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী
যুক্তরাজ্যের ওয়াটার পলুউশন গাইড, যারা পানির মাধ্যমে দূষণের মাত্রা কমাতে কাজ করছে, তারা বলছে, পানি দূষণে সাময়িক প্রভাবের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব অনেক বেশি পড়ে।
বিশেষ করে শিল্প কলকারখানার বজ্য মানব দেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এসব পানি ব্যবহার চর্মরোগ, টাইফয়েড, জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের মতো রোগ হতে পারে।
খাদ্যচক্রের মাধ্যমে ক্ষতি
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুষিত পানি বা নদীর ভেতর যেমন মাছ বা প্রাণী থাকে, যেসব ভেজষ উৎপন্ন হয়, দূষণ সেসব প্রাণীর ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ে।
খাদ্যচক্রের মাধ্যমে এসব ক্ষতিকর পদার্থ আবার মানব দেহের শরীরে চলে আসে। ফলে সরাসরি দূষিত পানির কাছাকাছি না থাকলেও, সেসব দুষিত পদার্থ এসব মাছের মাধ্যমে মানব দেহে আসে, যার ফলে ক্রুটি পূর্ণ জন্ম বা ক্যান্সার হতে পারে। এমনকি খাদ্য চক্রের মাধ্যমে মানব শরীরে ঢুকছে সীসা, প্লাস্টিকসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ।
শব্দ দূষণের কারণে হাইপার টেনশন
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ নয়েজ কন্ট্রোল বলছে, পথের শব্দের কারণে একজনের হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে।
এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশে থাকলে শিশুর জন্মগত ক্রুটির তৈরি হতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে ব্লাড প্রেশার, শ্বাসের সমস্যা এমনকি হজমের সমস্যার তৈরি হতে পারে।
খাদ্য দূষণে কার্যকারিতা হারাচ্ছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
খাদ্য দূষণের কারণে অন্ত্রের নানা রোগ, লিভার, কিডনি বা পাকস্থলী কার্যকারিতা হারাচ্ছে। গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ নানা সমস্যার তৈরি হচ্ছে। কখনো কখনো এসব কারণে ক্যান্সারেরও তৈরি হচ্ছে।
শিশুরা ছোটবেলা থেকে এ ধরণের দুষিত খাবার খেলে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বা বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পরিবেশ দূষণ এড়ানোর জন্য শুধু সরকার বা কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না। নিজেরা আগে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
এভাবে সরকার, জনগণ, সব সংগঠন মিলে একটি সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে পরিবেশ দূষণ থেকে নিজেদের রক্ষা করা যাবে না।