পরিবেশ ও প্রকৃতির নতুন রূপে নজর কেড়েছে কুয়াকাটা
লকডাউনে ছুটির দিনগুলোতে খাঁ খাঁ করছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকায় কোলাহলমুক্ত সৈকতের পরিবেশ ও প্রকৃতিতে যেন প্রাণ ফিরেছে।
আপন ভুবনে বেড়ে উঠেছে বিলীন হওয়া সাগরলতা। পুরো সৈকতে দেখা যাচ্ছে লাল কাঁকড়ার কারুকার্য। রূপালি ঝিনুকগুলো সেজেছে বাহারি সাজে।
মুক্ত পরিবেশে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। গোটা সৈকত যেন ছেয়ে গেছে সবুজের সমারোহে। আঠারো কিলোমিটার সৈকতের দুইধারে এমন দৃশ্য এখন সবার নজর কাড়ে।
লকডাউনের কারণে, গত ১ এপ্রিল থেকে পর্যটকশূন্য পুরো সৈকত। এই সুযোগে সৈকতে আপন জগৎ তৈরি করেছে ক্ষুদ্র এসব প্রাণী। পর্যটকদের চলাচল না থাকায় সৈকতের বালুতে মাথা তুলেছে সবুজ সাগরলতা। দোল খাওয়া ছোট ছোট সবুজ পাতা এক অনন্য রূপ দিয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে। সেই সঙ্গে স্বচ্ছ জলরাশিও জানান দিচ্ছে আপন রূপে ফেরার।
সৈকতের ট্যুর গাইড ফজলুর রহমান বলেন, “লকডাউনের কারণে কোনো পর্যটক না আসায় সি-বিচে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দেখতে খুব দারুণ লাগে।”
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ-২ প্রকল্পের পটুয়াখালীর সহকারী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, বিচে সৌন্দর্য রক্ষা করা এই সকল লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপের বাচ্চা মোটরবাইকের চাকার নিচে কিংবা জনসমাগমের পায়ের তলায় পিষে যায়। তাই আমরা গত ৫ মে সৈকতের দুই পয়েন্ট গঙ্গামতি এবং লেবুর বনে লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপের নিরাপদের জন্য বাঁশের বেষ্টনী দিয়ে অভয়াশ্রমের ব্যবস্থা করেছি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে এর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা সেটা আবার মেরামত করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপের অভয়াশ্রমে মোটরসাইকেল চালানো এবং শব্দদূষণ সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। এই অভয়াশ্রমটি কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, লকডাউনের ট্যুরিস্ট না থাকার কারণে কুয়াকাটা এখন যেন ঘুমন্ত পর্যটন এলাকা। তবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
কুয়াকাটার পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটাকে পর্যটনবান্ধব করে তুলতে আমি সবসময়ই চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এই সৌন্দর্যকে দীর্ঘমেয়াদি রূপ দিতে বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।